মঙ্গলগ্রহ যাত্রায় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি
স্বাস্থ্য ডেস্ক : মঙ্গল গ্রহে যাত্রা এখন আর কল্পনা নয়, বরং তা বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতেই। মঙ্গলে এই যাত্রায় যে মহাকাশচারীদের কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে তা আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আগে যা ভাবা হয়েছিল তার তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে মহাকাশচারীদের ক্যান্সারের ঝুঁকি।
ইউনিভার্সিটি অফ নেভাডার ফ্রান্সিস কিউসিনোটা এবং এলিডোনা কাকাও এর এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে। ইঁদুরের মাঝে টিউমার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তারা দেখেন, একটি চেইন রিঅ্যাকশন এফেক্টের কারণে অনেক বেশি দেহকোষ গ্যালাক্টিক কজমিক রে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে দেখা হয়েছিল রেডিয়েশন থেকে কোষ এবং এর ডিএনএ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো এর আশেপাশের সুস্থ কোষগুলোকেও প্রভাবিত করে। এটা ছিল নন টার্গেট এফেক্ট (NTE)। এখান থেকে দেখা যায়, লম্বা সময় ধরে মহাশূন্যে রেডিয়েশনের শিকার হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি আগে যা ভাবা হত তার চাইতে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়।
এই গ্যালাক্টিক কজমিক রে এর মাঝে থাকে আয়রন এবং টাইটানিয়াম পরমাণু, যেগুলো কোষের বড় ধরণের ক্ষতি করতে সক্ষম। এই গবেষণা বলছে, এমন কজমিক রে কম পরিমাণেও বেশ ক্ষতি করতে পারে। শুধুমাত্র ক্যান্সারই নয়, হতে পারে আরও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা। এর মাঝে আছে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, চোখে ছানি পড়া, সংবহনতন্ত্রের রোগ, এবং অ্যাকিউট রেডিয়েশন সিনড্রোম। মঙ্গলে গ্রহ অভিযানে যাওয়া সব মহাকাশচারীকেই এই ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এই ক্ষতি কমানোর উপায় আছে, কিন্তু এগুলো নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি।
গবেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে তথ্য সংগ্রহ করাটা জরুরি। কোষগুচ্ছকে কম রেডিয়েশনে ফেলে তাদের ওপর কী প্রভাব পড়ে, সেটা দেখতে হবে। বিশেষ করে ফুসফুস, পাকস্থলী, যকৃৎ, বুক এবং কোলনের কোষের ওপর এই পরীক্ষা করতে হবে। গ্যালাকটিক কজমিক রে কোষের নিউক্লিয়াসে বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে এবং এমন সব মিউটেশন ঘটাতে পারে যা থেকে হতে পারে ক্যান্সার, জানান গবেষক কিউসিনোটা। ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো আশেপাশের কোষগুলোকেও প্রভাবিত করে। এক সময় সুস্থ কোষেও দেখা দেয় মিউটেশন এবং ফলাফলস্বরূপ মানুষটি টিউমার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
মঙ্গলগ্রহে অভিযান কত সময় ধরে হবে তার ব্যাপারে সঠিক জানা যায় না। তবে তা ৯০০ দিন হবে বলে ধরা হয়েছে এই গবেষণায়। এই সময়ের মাঝে তারা যে ঝুঁকিতে থাকবেন তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। মঙ্গলের বায়ুমন্ডল বেশ পাতলা, ফলে পৃথিবীর চাইতে অনেক বেশি কজমিক রেডিয়েশন সেখানে সহ্য করতে হবে। আর যাতায়াতের সময়ের রেডিয়েশন তো আছে। এ কারণে মঙ্গলে যাবার আগেই এসব ব্যাপারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
(ওএস/এসপি/জুন ১৬, ২০১৭)