সদেরা সুজন,কানাডা থেকে :দেশব্যাপী চলমান পরিকল্পিত এবং অপ্রতিরোধ্য হত্যাকান্ড, জঙ্গী তৎপরতা, হিন্দু পুরোহিত, বৌদ্ধভিক্ষু, খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, ইমাম, সাংবাদিক, ব্লগার, আদিবাসি, মুক্তমনা লেখক, ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা, নির্যাতনসহ গত শুক্রবার ঢাকার গুলশানে পরিকল্পিত জঙ্গী হামলায় বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কানাডা শাখার উদ্যোগে মন্ট্রিয়লের এটওয়াটার মেট্রো স্টেশনের পার্শ্ববর্তী কাবোট স্কয়ার পার্কে এক বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে এই মানববন্ধনে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা উপস্থিত হয়ে এই জঘন্যতম বর্বরোচিত অপ্রতিরোধ্য হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ করেন।

মানববন্ধনে বিভিন্ন রকমের ব্যানার ফেস্টুন, পোষ্টার সম্মিলিত সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ‘স্টপ টেররিজম ইন বাংলাদেশ’, ‘সেইভ মাইনোরিটি’, ‘সেইভ ফ্রি-থিঙ্কার্স’, ‘সেইভ বাংলাদেশ’, ‘স্টপ টার্গেট কিলিংস ইত্যাদিসহ রকমারি স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত নির্যাতন, খুন ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশবাসীকে এই সমস্ত অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরুধী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ঘৃনা জানিয়ে অনতিবিলম্বে দেশের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ ও গুপ্তহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে মানববন্ধনে। মানবন্ধনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কানাডা শাখার নেতবৃন্দছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকরা এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত নির্যাতন, খুন ও সন্ত্রাসী হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন উত্তর আমেরিকার খ্যাতিনামা মানবাধিকার নেতা এডভোকেট উইলিয়াম স্লোন, ড. তরুন চক্রবর্তী, অরুন দত্ত, জয়দত্ত বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, এডভোকেট অমলেন্দু ধর, শ্যামল দত্ত, কবি সহিদ রাহমান, বিদ্যুৎ ভৌমিক, দিলীপ কর্মকার, সুনিল গোমেজ, প্রদীপ সরকার দোলন, শাহ মোস্তাইন বিল্লাহ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সরোজ দাস,। মিডিয়া ব্রিপিং এ ছিলেন দীপক ধর অপু। প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে মূলধারার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়াও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। কানাডার প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো নিউজটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। গাড়ীর হর্ণ বাঁজিয়ে, হাত নেড়ে মূলধারার মানুষরা মানববন্ধনকে সমর্থন জানায়।

বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অপ্রতিরোধ্য চলমান বর্বর হত্যাকান্ড অনতিবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে দেশ খুব তাড়াতাড়ি সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে পড়বে বলে যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে-। দেশব্যাপী সংখ্যালঘু খুন ছাড়াও তাদের ওপর নানারকম নির্যাতন, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ, জমিজমা দখল, লুটপাট, মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নির্যাতনে আমরা ভীত। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভিতরে নিরীহ, অসহায় মানুষদের কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের উপসানলয়ে গিয়ে প্রার্থনা, পূজার্চনা এমন কি সাধারন জীবনযাপন করতে ভয় পাচ্ছে। যে মুক্তিযুদ্ধের চিতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো এবং সকল ধর্মের মানুষ নিরাপধে বসবাস করবে এ চেতনায় সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু ইদানীং অপ্রতিরোধ্য সংখ্যালঘুদেরকে গুপ্ত হত্যা, মন্দির, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ভয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য তারা দেশান্তর হতে বাধ্য হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই নিশ্চিন্তে-নিরাপদে একজন নাগররিক হিসেবে বেঁচে থাকতে চায়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদেরকে তাদের নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশে নিরাপদে, নিশ্চিন্তে থাকার সমস্ত ব্যবস্থা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে এবং অব্যাহত সংখ্যালঘু নির্যাতন বর্বরোচিত জঙ্গী হামলা করে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবি জানান।

(এসএ/এস/জুলাই০৪,২০১৬)