ভালুকায় বিএনপির সাবেক এমপি আমানুল্লাহ চৌধুরীর ইন্তেকাল
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে তিনবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমান উল্লাহ চৌধুরী শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি প্রায় এক বছর ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন।
গত মঙ্গলবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে স্কায়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
রোববার সকালে নয় পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শরীক হন।
বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লজায় দ্বিতীয় জানাজা এবং বাদ এশায় পুরান ঢাকার কায়াতটুলী মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠানের পর লাশ হিমঘরে রাখা হবে।
সোমবার বাদ যোহর ময়মনসিংহের ভালুকা ডিগ্রি কলেজ মাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে পিতা-মাতার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
আমান উল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে ময়মনসিংহের ভালুকাসহ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শতশত মানুষ গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন।
আমান উল্লাহ চৌধুরী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা মরহুম আফতাব উদ্দিন চৌধুরী মুসলিম লীগের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের এমএনএ এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। পৈত্তিক সুত্রেই আমান উল্লাহ চৌধুরী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ (১৫ ফ্রেরুয়াারি) সালে বিএনপির দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন নিবেদিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন সদালাপী, অর্থ ও পেশীশক্তি বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তার স্ত্রী বেগম রাহিজা খানম ঝুনু একুশে পদক ও নৃত্যগুরু মাতা হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত। তার আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় ভালুকা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধামশুর হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়েল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ ভরাডোবা, ধামশুর, বর্তাসহ বিভিন্নস্থানে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। অবহেলিত গড় অঞ্চলে নারী শিক্ষার অগ্রগতি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রশাসনিক গুরুত্বপুর্ণ দাফতরিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯১ সালে তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালেই ভালুকায় ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ ও তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ অবদানের কারণে তিনি এবং তার পরিবারকে ভালুকা উপজেলার উন্নয়নের রূপকার বলা হয়ে থাকে।
তার মৃত্যুতে বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফকরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের জেলা আহবায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ শাহজাহান ও সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ আলী, যুবদলের জেলা সভাপতি শামীম আজাদ, ছাত্রদলের জেলা সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, শ্রমিকদলের সভাপতি আবু সায়িদ, মহিলাদলের জেলা সভাপতি অধ্যাপিকা রায়হানা ফারুক, স্বেচ্ছাসেবকদলের জেলা সভাপতি শাহিদুল আমিন খসরু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল হক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আলী আকবর আনিছ গভীর শোক প্রকাশ করেন।
(এসইএস/এএস/জুন ০৮, ২০১৪)