ফ্রান্স সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী, আলোর মুখ দেখবে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ও ভাস্কর্য
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্কয়ার ও ভাস্কর্য স্থাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ফ্রান্সের ‘পারে লূ মুনিয়াল’ শহরে।
প্যারিস প্রবাসী ইউরোপের স্বনামধণ্য কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কাজী এনায়েত উল্লাহ কর্তৃক টানা ৪ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফসল, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থায়ন করবে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় কনস্ট্রাকশান কাজ অচিরেই শুরু হবে বলে জানিয়েছে ‘পারে লূ মুনিয়াল’ পৌর প্রশাসন। বাংলাদেশের বাইরে বঙ্গবন্ধুর নামে একই স্থানে স্কয়ার ও ভাস্কর্য এটিই প্রথম।
ঐতিহাসিক এই মুহুর্তটিকে আরো স্মরণীয় করে রাখার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের যে কোন সময় ফ্রান্স সফর করবেন বলে আশা করছে ফরাসী প্রশাসন। এলক্ষ্যে ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কাজী এনায়েত উল্লাহর মাধ্যমে ফরাসী কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র ইতিমধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
মে মাসের শেষান্তে ঢাকায় গিয়ে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন কাজী এনায়েত উল্লাহ। এর আগে প্যারিসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম ‘পারে লূ মুনিয়াল’ শহর সফর করেন এবং স্থানীয় মেয়র সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা করেন।
শনিবার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে কাজী এনায়েত উল্লাহ জানান, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে বয়সের কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি আমার, কিন্তু যাঁর জন্য আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ, তাঁর অমর কীর্তিগাঁথার স্বীকৃতির সাথে ফরাসী প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করতে পারায় আজ আমাদের এই সার্থকতা। এর জন্য গত ৪ বছরে প্রশাসনিকভাবে অনেক অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমার। ফ্রান্সের একজন ‘ইন্টিগ্রেটেড সিটিজেন’ হিসেবে মূলত এটা লাল-সবুজ পতাকার প্রতি আমার ভালোবাসারই অংশ।
১৯৭৮ সাল থেকে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন কাজী এনায়েত উল্লাহ, যিনি একাধারে প্যারিস-ঢাকা ভিত্তিক বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং (বিবিসি)’র ডিরেক্টর জেনারেল। ফ্রান্সের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশী পন্যের নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানে এবং বাংলাদেশের রফতানীকারকদের বহুমুখী কল্যানে কাজ করছে বিবিসি। কনসালটিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর কার্যক্রম ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে ফ্রান্স-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কের চলমান উত্তরণে সহায়ক শক্তি হিসেবে ফরাসী প্রশাসনের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বার।
ঢাকার বনানীর ঐতিহ্যবাহী ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’র চেয়ারম্যান পরিবারের কৃতি সন্তান কাজী এনায়েত উল্লাহ ফ্রান্স সহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রিয়েল এস্টেট, রেস্টুরেন্ট ও এয়ারলাইন্স ব্যবসায় আকাশচুম্বি সাফল্যের অধিকারি। উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজের ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ‘জিএসএ’ হিসেবে কাজ করে আসছেন সাফল্যের সাথে।
কয়েক বছর আগে ফ্রান্স-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র ‘লাল টিপ’ এর সফল প্রযোজক কাজী এনায়েত উল্লাহ ফ্রান্স সহ ইউরোপের বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যানেও নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন বছরের পর বছর। ইউরোপের ৩০ টি দেশের বাংলাদেশিদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে আছেন তিনি।
৩ যুগের বর্ণাঢ্য প্রবাস জীবনে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সাথে কখনো সম্পৃক্ত না থাকলেও ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ থিম নিয়ে কাজী এনায়েত উল্লাহ বহুমুখী প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী মেলে ধরেছেন প্রিয় মাতৃভূমিকে। যেকোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের উর্ধ্বে থেকে দেশপ্রেমকেই চলার পথের পাথেয় করে নিয়েছেন বছরের পর বছর।
(এটিআর/জুন ০৮, ২০১৪)