নওগাঁ প্রতিনিধিঃ ঈদ মানেই আনন্দ। আর ঈদ আনন্দের প্রধান আকর্ষনই হলো, নতুন পোশাক।  ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নওগাঁর মার্কেটগুলোতে কেনাবেচা জমে উঠছে। ঈদে ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বিক্রেতারাও পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বেশ আকর্ষনীয় করে। অন্যান্য বছর রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈদের কেনাকাটা জমলেও এবার দশ রমজানের পর থেকেই নওগাঁর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। 

এবার ঈদে তরুনীদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বাজারে এসেছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ জামা। সম্প্রতি ভারতীয় হিন্দি হিট ফিল্মের নাম ‘বাজিরাও মাস্তানি’। ওই ছবির নায়িকা এমন পোশাক পরেছিলেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েদের মধ্যে এবার বাজিরাও মাস্তানি পোশাকের চাহিদা বেশি। বরাবরের মতো এবারেও ছেলেদের চাহিদা অনুযায়ী লং পাঞ্জাবী, শর্ট পাঞ্চাবী, স্বাভাবিক পাজামা-পাঞ্জাবি ও স্যান্ডেল, মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ধরণের থ্রি-পিস এবং শিশুদের রকমারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এবারের ঈদের বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তবে দোকানীরা জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নওগাঁর কাপড়পট্টি,আন্দবাজার-গীতাঞ্চলী শপিং কমপ্লেক্স, দেওয়ানবাজার, জহির প্লাজা, হাসনাহেনা মক্কা মার্কেট, শুভ প্লাজা, ইসলাম মার্কেট, সৌদিয়া সুপার প্লাজা, মাজেদা সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। তার মধ্যে আয়োজনের ভিন্নতার কারণে শিলামনি গার্মেন্টস, শিপলু বুটিকস, বিশাল ক্লথ ষ্টোর, বাঁকুড়া বস্ত্রালয়, বিনাপানি বস্ত্রালয়,কুমাড়খালী বস্ত্রালয়, রাজ গার্মেন্টস, পালকী বুটিকস, প্রিয়া ফ্যাশনসহ বেশ কিছু দোকানে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায়। বিপণিবিতানগুলোতে নারী ও শিশুদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েদের বিভিন্ন ধরণের থ্রি পিস ১হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজেরাও মাস্তানি’ জামা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ৮শ’ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। আর ছেলেদের সুতি পাজামা-পাঞ্জাবি ১ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। শেরওয়ানি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার দশ রমজানের পর থেকেই ঈদের কেনাকাটার ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। তবে ঈদের আগে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতাদের।
নওগাঁয় তৈরি পোশাক কাপড়ের অভিজাত দোকান হিসেবে পরিচিতি ‘শিলা মনি’র মালিক নেপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘দশ রমজানের পর থেকেই এবার ঈদের কেনাকেটা পুরো দমে জমে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা ভালই হবে বলে মনে করছেন তিনি।’ রাজ গার্মেন্টসের সুবল চন্দ্র ঘোষ জানান, শিশুদের পোশাক সর্বাধিক বিক্রি হচ্ছে।
শিপলু বুটিকসের মালিক জাহান আলম জানান, মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘বাজেরাও মাস্তানি’ পোশাক। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের টপস, ক্যাটটক, রাজিবা, জিপসি, ফ্লোর টাচ পোশাকের চাহিদাও মোটামুটি রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের হাল ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে দোকানে বিভিন্ন ধরনের ও দামের শাড়ি ও পাঞ্জাবির সমাহার রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঈদের কেনাকাটা করতে পার-নওগাঁর তরুনী আশা খাতুন শিলামনি থেকে কিনলেন তার পছন্দের পোশাক বাজিরাও মাস্তানি। দোকানী দাম নিয়েছেন ৬হাজার টাকা। পত্মীতলা থেকে তিন মেয়েকে সঙ্গে করে নওগাঁ শহরে এসেছেন রওশন আরা বেগম। তিনি বলেন, ‘তিন মেয়েই বায়না ধরেছে, এবার ঈদে তাদের ‘বাজিরাও মাস্তানি’ জামা চাই। তিনটে জামা কিনতে ২৫ হাজারের মতো টাকা খরচ হলো। মেয়েদের আবদার পূরণ না করে উপায় কি? কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী শাপলা ক্লথ স্টোরের মালিক জিহাদ আলম বলেন, ‘সাধারণত রোজার শুরু থেকেই থান বা ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ, ছিট কাপড় কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে। এজন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে থাকেন। তবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে আমাদের বেচাকেনা ততই কমবে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক বিক্রেতা দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে।’ বিনাপানি বস্ত্রালয়ের মালিক রঘুনাথ সাহা জানালেন, ক্রেতারা এবার বেশ দামাদামি করছে।
এদিকে নওগাঁয় বেশ কিছু ভাল মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি এবং ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। আর থান বা ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই নওগাঁর একটা সুনাম রয়েছে। ফলে নওগাঁর লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না। বরং নওগাঁ ছাড়াও বর্তমানে পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, বগুড়া ও রাজশাহী জেলার লোকজনও নওগাঁয় কেনাকাটা করতে আসছেন।

(বিএম/বি এইচ২৪জুন২০১৬)