পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
সালাম নিবেন। আমি ফরিদপুরের সেই সাংবাদিক প্রবীর সিকদার, আমাকে ২০০১ সালে রাজাকাররা খুন করেও পারেনি খুন করতে , আপনার স্নেহের ছায়ায় দেশে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করিয়ে আমি কোনো মতে জীবন ফেরত পেলেও আমাকে হারাতে হয়েছে একটি পা; হারাতে হয়েছে একটি হাতের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা।

এক পায়ে ভর করে জীবন চলেছে দীর্ঘ ১৫ বছর, কিন্তু কখনো কোনো প্রয়োজনেই আপনার কাছে কোনো আবদার বা দাবি করে চিঠি লিখিনি বা লিখবার প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে নিরন্তর আমি গভীরভাবেই উপলব্ধি করেছি , আপনি কখনোই আমাকে ভুলে যাননি। তার বড় প্রমাণ পেয়েছি দুটো ; আপনার আগ্রহেই আমি ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে চীনে যাই আর ২০১৫ সালের আগস্টে যখন আমাকে গ্রেফতার করে ফরিদপুরে নেওয়া হয় এবং অর্ধশতাধিক মামলায় জড়িয়ে বাকি জীবন জেলে রাখার হুমকি দেওয়া হয়, তখন কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতার ইশারায় দুই দিন যেতে না যেতেই আমাকে জামাই আদরে জেলখানা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়; আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি সেই অদৃশ্য ক্ষমতা আর কারো নয়, আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন বোন শেখ হাসিনার।

১৯৭১। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমার পরিবারের সবাই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য কাজ করেছেন। স্বাধীনতার সূর্য দেখার আগেই পাকিস্তানের দোসরদের হাতে নৃশংস খুনের শিকার হন আমার বাবা, কাকা, দাদুসহ বেশ কয়েক স্বজন। সেইদিন শিশুমনে আমি বঙ্গবন্ধু মুজিবকেই পিতা জ্ঞানে শ্রদ্ধা করেছি। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নৃশংস মৃত্যুর পর বাবা হারানোর যন্ত্রনায় কাতর হয়েছি। ১৯৮১তে আপনার দেশে ফেরায় আমি ছাত্রলীগের উল্লসিত কর্মী হিসেবেই ভেবেছি , আমার বোন শেখ হাসিনাই শুধু পারবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে।

আমার আকাঙ্ক্ষা শুধুই একটি। আর সেটি হচ্ছে মৃত্যুর আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখে যাওয়া। আমি আমার সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়ে সেই কাজটি নিরন্তর করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ শুধুই সম্ভব শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগের পক্ষেই। আপনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সেই কাজটি সফলভাবে করলেও কোথাও কোথাও তার ব্যত্যয় ঘটছে আপনার অজান্তে। কোথাও যখন আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে দেখি তখন আর নিজেকে সামাল দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর জেলা ফরিদপুর । সেই ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ হবে লুটেরাদের আস্তানা ! এই বিচ্যুতি মানি কি করে! ফরিদপুর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নানা বিচ্যুতি নিয়েই আমার আজকের এই চিঠির অবতারণা।

আপা, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আজ চিঠি শেষ করতে পারবো না। আজ শুধু ভূমিকা দিয়েই বিরতি নিচ্ছি। কাল চিঠির বাকি অংশ লেখা শুরু করবো।

আপনি ভালো থাকুন আপা। আপনার ভালো থাকার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমার ও বাংলাদেশের ভালো থাকা।

ইতি,
আপনার স্নেহধন্য
প্রবীর
২৮ মে ২০১৬
ঢাকা।