আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুইশ পচিশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা গতকাল শুক্রবার ভোরে শুরু হয়েছে। মেলা চলবে মধ্য রাত পর্যন্ত। মেলায় আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করে। মেলায় উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা রয়েছে।

আয়োজক উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায় জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্বে সোনাই চাঁদ নামে এক কন্যা শিশুর ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতে একটি নিম গাছের নীচে মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন। ক্রমেই তাঁর অলৌকিকত্ব এলাকায় ছড়িয়ে পরে। তখন থেকেই ওই স্থানে বাৎসরিক পূজা হয়ে আসছে।

মেলা কমিটির সভাপতি যতীশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রি. থেকে শুরু করে পঞ্জিকা মতে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্ন মহাউৎসবের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাঁর মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়ামণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শণার্থীদের প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে প্রায় দুইশ পচিশ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় হরবিলাস মিস্ত্রী (৭৯) সহ প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

এদিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। একদিন আগে থেকেই মেলার জমজমাট আয়োজন শুরু হয়। তাই প্রতিটি বাড়ি আত্মীয় স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে পরে। বাড়িতে বাড়িতে চিড়া, মুড়ি, খেঁজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যায়। এবছরও মেলার প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের মধ্যে মারবেল খেলার প্রতিযোগিতা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৬ বর্গ কি.মি এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। এর সাথেই একটি বড় খোলা অনাবাদী জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ খাদ্য দ্রব্যের দোকান।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা সমীর বিশ্বাস জানান, আমরা মারবেল মেলার কথা শুনে এসেছি। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা আমাদের খুব ভাল লেগেছে। রামানন্দের আক গ্রামের জয়দেব বাগচীর ছেলে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র দিগন্ত বাগচী জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছে মারবেল খেলার জন্য। মেলায় মারবেল খেলার জন্য অনেকে দূরদুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

(টিবি/এএস/জানুয়ারি ১৫, ২০১৬)