টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহে ‘সাপ্তাহিক’ সাংবাদিককে ‘না’ !
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বিদেশ বিভুঁইয়ে বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতির ‘বলি’ হয়েছেন এবার এক প্রবাসী সাংবাদিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি জাপান সফরে টোকিওতে বিভিন্ন কর্মসূচীর সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ দেয়া হয়নি বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচারিত ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার জাপান প্রতিনিধি রহমান মনিকে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অফিসিয়ালি রেজিস্টার্ড সুপরিচিত এই সাংবাদিক এর আগে একাধিকবার জাপানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর (পিএম ভিজিট) কাভার করলেও এবার ঘটলো ব্যতিক্রম। নেপথ্যে টোকিওর বাংলাদেশ কমিউনিটির মুখচেনা কিছু সমাজবিরোধী কুচক্রী, যারা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট সরকারী লোকজনদের।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রহমান মনি টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাপানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও শেষ মুহুর্তে ঘটানো হয় অঘটন। সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হয়, ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার রিপোর্টার আওয়ামী লীগের ‘বিশ্বস্ত সাংবাদিক’ নন বরং বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত। বানোয়াট-ভিত্তিহীন এসব ভূয়া তথ্যকে আমলে নেয়ার পরিণতিতে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন টোকিওর এই সাংবাদিক। ২৭ মে মঙ্গলবার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন প্রেস বা মিডিয়া সংক্রান্ত বিষয়াদি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন দূতাবাসের প্রথম সচিব বেবী রানী কর্মকার, যার সাথে রহমান মনির নিয়মিত অফিসিয়াল যোগাযোগ ছিল শুরু থেকেই। প্রথম সচিব বেবি রানী মেইলে রহমান মনিকে তার ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার আইডি কার্ডও পাঠাতে বলেন যাতে জাপানী পররাষ্ট্র দফতর পিএম ভিজিটের বিশেষ স্টিকার ইস্যু করতে পারে তার নামে। রহমান মনি নিজে যেহেতু আগে থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিসিয়ালি রেজিস্টার্ড, তাই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও যথারীতি প্রস্তুত ছিলেন বাংলাদেশি অন্য সব সাংবাদিকদের সাথে তার কাগজপত্রও চূড়ান্ত করতে।
শেষ মুহুর্তে হঠাৎ করে জাপানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ কর্মকর্তা সাংবাদিক রহমান মনিকে পাঠান বিশেষ মেইল (The Embassy told me that MOFA should not issue a press ID for you. I have no idea what is going on, but as I told you at the beginning, it is the matter extremely depends on the decision by the Embassy. We are not in the position to judge you. If you need further clarification, please contact the Embassy) যাতে উল্লেখ করা হয়, টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জাপানী পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে রহমান মনির নামে কোন কার্ড ইস্যু না করার জন্য। সুনির্দিষ্টভাবে মেইল প্রাপ্তির পর ‘সাপ্তাহিক’ প্রতিনিধি দূতাবাসের প্রথম সচিব বেবী রাণীর সাথে নতুন করে যোগাযোগ করেলেও কোন সদুত্তর পাননি।
মঙ্গলবার এই প্রতিবেদক ব্যক্তিগত পরিচয় সূত্রে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিগত বছরগুলোতে ইউরোপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেশ ক’টি রাষ্ট্রীয় সফর কাভার করার সুযোগ হয় এই প্রতিবেদকেরও। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, টোকিওতে এ যাত্রায় সাংবাদিক রহমান মনির ক্ষেত্রে নেক্কারজনক যা ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে, মূলতঃ এক্ষেত্রে প্রথম সচিব দূরের কথা, রাষ্ট্রদূতদেরও তেমন কিছু করার থাকে না বরং তাদেরকে দিনরাত বিব্রতকর সময় অতিবাহিত করতে হয় বাংলাদেশ ভিত্তিক নোংরা রাজনীতি সামাল দিতে গিয়ে।
পৃথিবীর যে কোন দেশেই বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা বা রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালনা ও অংশগ্রহণ সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে শতভাগ অসাংবিধানিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সূর্যোদয়ের দেশ জাপানও আজ এই কলংক থেকে মুক্ত নয়। পিএম ভিজিটে সাংবাদিক রহমান মনিকে ‘ব্ল্যাক লিস্ট’ করে একদিকে জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক’ এর লক্ষ লক্ষ পাঠককে যেমন হেয় করা হয়েছে, অন্যদিকে টোকিওর ‘হাইব্রিড’ কিছু ‘ভিলেজ পলিটিশিয়ান’ কর্তৃক কলংকিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ জাপান সফরকে।