ক্ষুধার্ত আমি

আমি এক তৃষিত চাতক,
সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে,
আমি তৃপ্ত নই।
শুধু বৃষ্টির জল চাই
দোহাই নিষ্টুর মেঘ
আমাকে এক ফোটা বৃষ্টি দাও।

আমি বিরহী নিশাচর
সুর্যের প্রখর রোদ্দুরে আমি সরব নই,
শুধু রাত্রির নির্জনতা চাই।
হে উজ্জল ধ্রুবতারা
মধ্যরাতে তুমি আমায় নির্জনতা দাও।
আমি ক্লান্ত পথিক
রাজধানীর বিশাল প্রাসাদে বাসযোগ্য নই আমি।
শুধু নির্ভরযোগ্য আশ্রয় চাই,
হে প্রিয় পৃথিবী আমার
আমাকে ভালোবাসার কুঠির দাও।
আমি এক বুভূক্ষ শকুন
পশুত্বের গলিত শবদেহে
আমি তুষ্ট নই,
ভালোবাসার জীবন্ত কাঠামো চাই।
হে বিধ্বস্ত সমাজ,
আমাকে কাংখিত মানুষ দাও।



কবিতার প্রয়োজনে

আমার কবিতার প্রতিটি শব্দের প্রয়োজনে
আমি তোমার কাছে আসি,
আলতো পরশে নিথর দুঃখগুলো
উষ্ণতা খুঁজে পায়।
ব্যাথার নীল হাতটি আমার কলম ধরে।
কবিতা এবং আমি মুখোমুখি হই।
জেগে উঠি বাস্তবের বিপরীতে,
বেদনার বালুচরে ভালোবাসার বৃষ্টি নামে।
আমি সতেজ হয়ে উঠি,
বৃক্ষটি ভরে যায় পাতায় পাতায়,
এবং অবশেষে,
ফুলে ফলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠি আমি।



নীল অনুভূতি

বেদনার বালিয়াড়ি পাড়ি দিয়ে
ভালোবাসার সমুদ্রে অবগাহনের ইচ্ছা ছিল,
নিষিদ্ধ পত্রালাপ-আর কতকাল!
এবার চাই কামজ অনূভুতির আলিঙ্গন,
চোখে চোখে, ঠোঁঠে ঠোঁঠে
নীরব অবগাহন।
কাল অক্ষরগুলি বড় আটপৌরে,
বিনিদ্র রাতের একাকীত্বে
আমি সরব হতে চাই।
নীরব নিকুঞ্জ ভরুক গুঞ্জনে ক্ষতি নেই,
ভোরের বাতাস ঘোষণা করুক চরমপত্র।
শিউলী ঝরুক রোদ্দুরে,
আমি কুড়িয়ে মালা গেঁথে নেব।
তুমি পর বা না পর,
অতঃপর নিজেকে সমর্পণ করে নিঃস্ব হবো।


সেই তুমি

তুমি কি কখনও নদীর কাছে গিয়েছো ?
তাহলে ভাঙ্গনের রূপ তুমি দেখতে,
চৌচির পাড়ের সরব আত্মবিসর্জন।
তুমি দেখনি বলে
দেখলে না আমার হ্রদয় কতটুকু ভাঙলো।
নির্মেঘ আকাশে কখনও অবকাশে
ভুল করে তাকালে জানতে,
একটা আকাশে নক্ষত্র যতই থাকুক
চাঁদ বা সুর্য একটাই।
দূর থেকে কখনও পাহাড় দেখেছো ?
আমার ভূমিতে আমি তেমন,
নিস্তব্দ, নীরব, নিশ্চল,
আমি ভালোবেসে শুধু চেয়েছিলাম তোমাকেই,
এবং সেই তুমি
বোকার মতোই আমাকে কাঁদালে।


শুধু তোমার জন্যে

বিন্দু থেকে রশ্মি পর্যন্ত
বি¯তৃত অনুভূতিগুলো
কোন রৈখিক গতিতে ছড়ায় অঙ্গে।
কিছুটা ভালোবাসা, কিছুটা অবহেলা
কিছুটা নৈসর্গিক ভাবনা, এইতো জীবন যাত্রা।
বিত্ত, বৈভব, রঙ্গিন প্রাসাদ
সব তুচ্ছ আমার কাছে,
আমি ভালোবাসার সমুদ্রে
অবগাহন করবো ইচ্ছোমতো।
আকন্ঠ পান করবো প্রেমের সুধা
এবং প্রয়োজনে ফোটা ফোটা
আস্বাদন করব বেদনার নীল নির্যাস।
কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হয়েও
গোলাপটা আমি ছিড়ব-ই
শুধু তোমার জন্যে।


মৃত্তিকায়

পৃথিবীর চৌকাঠ পেরিয়ে
তুমি কি স্বর্গে যেতে চাও উর্বশী ?
আকাশের নিলীমায় হারাতে চাও,
ওখানে সুখ নেই।
পা রাখো মর্ত্যরে কঠিন মৃত্তিকায়,
বিন্দু বিন্দু পান করো
কষ্টের নীল নির্যাস
নীল কন্ঠ হতে ভয় কি ?
দঃখের সাগরে ভাসতে থাকো অনন্তকাল
অমৃতের সন্ধানে ছুটে ছুটে
বড় বেশী ক্লান্ত তুমি,
ক্ষুধার্ত ছিড়ে ছিড়ে খাও
বেদনার নরম পাউরুটি
অরুচি হলে
মেখে নাও যন্ত্রনার সাদা মাখন।
সুরভিত পারিজাত হয়তো বা নেই
কামজ গন্ধে মাতাল হবে।
ইন্দ্রপুরীতে না হয় নাইবা গেলে
এখানে প্রচুর স্তাবক দল
তোমার প্রেমের প্রত্যাশায় থাকি।



নন্দিতাকে

চৌচির বুকের ক্রন্দন ধ্বনি
শুনতে চেয়োনা নন্দিতা,
স্বপ্নের চিতা জ্বলছে অর্হর্নিশি
ভালোবাসার বৃষ্টিতে নিভবে কি তা ?
মধ্যাহ্নের রোদ্দুরে মসৃণ পেলবতা নেই,
অথৈ সমুদ্রে নেই জীবনের আশ্বাস
ধূতরার ফুলে কেউ কি খুঁজে পায়
প্রেমের মধুময় নির্যাস ?
ফিরে যাও তুমি, হে শ্বাশত নারী
কামজ মৈথুনে নেই প্রয়োজন।
অশরিরী ভাসব স্বপ্নস্রোতে
নিরুত্তাপ সমুদ্রে করব অবগাহন,
পার্থিব আখাংকার তপ্ত বালুচর
তৃষ্ণা জাগিয়ে দিয়ে স্তব্দ নীরব।
নৈঃসর্গের ক্ষুধায় আমি তৃপ্ত হতে চায়,
দীপ্ত হোক আজি দৈন্যতার গৌরব।
রিক্ততার স্নিগ্ধ গন্ধে,
আমার কুঠির উম্মাদ হবে।
অতঃপর হবো রাজাধিরাজ,
শুন্য হাতে আমায় ডাকবে যখন।