আগৈলঝাড়ায় কারিগরি প্রশিক্ষণ
বরিশাল প্রতিনিধি : শুভ্রা মিস্ত্রি এখন দশম শ্রেনীর ছাত্রী। মাত্র দু’বছরের প্রশিক্ষণে সে এখন সু-দক্ষ মেকানিক্যাল মিস্ত্রি। গ্রামের ইঞ্জিন চালিত ছোট-বড় মেশিনের যেকোন সমস্যা কাজের মাধ্যমে সমাধান করে আর্থিক লাভবানের পাশাপাশি এখন সে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। জেলার হিন্দু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের জেমস্ যোসেফ মিস্ত্রির কন্যা শুভ্রা।
একই ক্লাশের ছাত্রী শুক্লা বাড়ৈ, শুভ্রা বল্লভ সু-নিপুন ইলেকট্রিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে মাত্র এক বছরের প্রশিক্ষণে ড্রেসমেকিংয়ের প্রায় সকল কাজ আয়ত্ব করে এখন কারিগর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে দশম শ্রেনীর ছাত্রী বর্না হালদার, শ্যামা হালদার, লাকি বালা, নবম শ্রেনীর ছাত্রী মিতু রায়, শিরিন আক্তার, পপি রায়সহ ৩০জন ছাত্রী। তারা সবাই একই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ওইকেন্দ্রে ওয়েলডিংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নবম শ্রেনীর আরেক ছাত্রী আকলিমা আক্তার। সে জানায়, যেসব কাজ সাধারনত পুরুষেরা করে থাকেন, সেসব কাজগুলো যে নারীরাও করতে পারে, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সে ওয়েলডিংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সূত্রমতে, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের (টেকনিক্যাল) প্রশিক্ষণের জন্য আগৈলঝাড়ার রাজিহারের স্বেচ্ছাসেবী এনজিও আলোশিখায় ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এসএসসি ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ বিনা বেতনের এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি লাভ করে। সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অতুল চন্দ্র বালা জানান, অষ্টম শ্রেনী পাশ শিক্ষার্থীদের ভর্তির মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জন্য সেন্টারে বর্তমানে চারটি ট্রেডে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, ড্রেসমেকিং এবং ওয়েলডিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেডে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যারমধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে নারী শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন কেন্দ্রেই ড্রেস মেকিংয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরি করছেন কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের শিল্পী অধিকারী। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে অসংখ্য নারী শিক্ষার্থীরা। স্বেচ্ছাসেবী এনজিও আলোশিখা রাজিহারের নির্বাহী পরিচালক জেমস্ মৃদুল হালদার বলেন, এখানে নারী শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে ভোকেশনাল টেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অসংখ্য নারী শিক্ষার্থীরা এখন পড়াশুনার পাশাপাশি এলাকার কাজ করে আর্থিক লাভবানের পাশাপাশি সুনাম অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা।
(টিবি/পিবি/মে ১৬,২০১৫)