শুক্রবার বন্দর গণহত্যা দিবস
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ তথা বন্দরবাসীর জন্য ৪ এপ্রিল গভীর শোকের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে পাক হানাদাররা। বন্দরবাসীর জন্য দিনটি বড়ই বেদনা এবং শোকের। এ দিন বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৪ জন হিন্দু-মুসলমান নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। পরে লাশগুলো আগুনে পুড়িয়ে উল্লাস করে বর্বর পাক বাহিনী। সে দিনের কথা মনে হলে আজও অনেকের গাঁ শিউরে ওঠে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে বন্দরে ঘটবে রাজনৈতিক নেতাদের মিলন মেলা।
মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠে 'অমর বাঙ্গালী' নামে একটি পাকিস্তান বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এর জের ধরে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসররা ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কমপক্ষে ৫৪ জন নিরস্ত্র মানুষকে ধরে আনে। রাজাকাররা বাড়ির লোকজনদের মধ্যে কে কে আওয়ামী লীগ করে ও সাংস্কৃতিক সংগঠন করে তা চিনিয়ে দেয়। বন্দর উপজেলার সিরাজদ্দৌলা ক্লাব মাঠে ধরে আনা লোকজনকে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এরপর লাশগুলো গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে পৈশাচিক উন্মত্ততায় নেচে উঠে পাক হানাদার ও রাজাকাররা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন জানান, এ ঘটনার নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৫ জনের নাম পাওয়া গেছে । তারা হলেন, ছমির উদ্দিন সরদার, রেজাউল ইসলাম বাবুল, মমতাজ উদ্দিন মাস্টার, আলী আকবর, আমির হোসেন, নায়েব আলী, আলী হোসেন, ইউসুফ আলী, সৈয়দ আলী, মোবারক হোসেন, সূর্য চন্দ্র কানু, জমুরা চন্দ্র কানু, লক্ষণ চন্দ্র কানু, গোপাল চন্দ্র, ভগবত দাস, দুর্গা চরন প্রসাদ, নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ, ইন্দ্র চন্দ্র দাস, উমরেশ মন্ডল, দিগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, কানাই লাল কানু, বনেল চৌধুরী, হারাধন মাস্টার, নারায়ণ চৌধুরী, সুরেশ চন্দ্র দাস প্রমুখ।
এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবার, এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বন্দর উপজেলার সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলন, প্রথম প্রহর রাত ১২টায় মোমবাতি প্রজ্জলন, সকাল সাড়ে নয়টায় শোক মিছিল, শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষে বন্দর থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ হতে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। বন্দর গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে শুক্রবার সকালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরনে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাব মাঠ সংলগ্ন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বন্দর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকাল ৩ টায় বন্দর সিরাজদৌল্লা মাঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বন্দর শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বন্দর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমান্ডার কাজী নাসিরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) কে এম সফিউল্লাহ্ বীর উত্তম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে সংসদ সসদ্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ- ৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক মো আবদুল হাই এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি চন্দন শীল।
সম্মানিত অতিথি হিসাব উপস্থিত থাকবেন, দৈনিক বাংলা ৭১ ও উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সম্পাদক প্রবীর সিকদার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সম্পাদক সামিউল্লাহ মিলন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান খসরু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শহর শাখার সভাপতি জাকিরুল আলম হেলাল, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম, যুব মহিলা লীগের সভাপতি মাহমুদা মালা, বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি মো হাবিবুর রহমান, বিএম ইউনিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি রোটারিয়ান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো আমিরুল ইসলাম, ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা কাজী সাহিদ আহমেদ, বন্দর থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি এমএ রশীদ, জাতীয় পার্টি জেলার সভাপতি আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ্ সানু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়অ বেগম, বন্দর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এমএ লতিফ, মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান খান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার মো আফজাল হোসেন, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ফয়সাল মো সাগর, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আনোয়ার হোসেন আনু, ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার মো সিরাজুল ইসলাম,বন্দর নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল ইসলাম, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আরিফ প্রমুখ।
(ডিকেএম/অ/এপ্রিল ০৩, ২০১৪)