পুলিশি সিদ্ধান্তে হতাশ ফারুকী
নিউজ ডেস্ক : আজ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর নির্মাণের নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প। নাটক-সিনেমায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পুলিশের চরিত্রে অভিনয় ও পোশাক ব্যবহার করা যাবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে হুট সিদ্ধান্তে কাল থেকে সিনেমাপাড়া সমালোচনা মুখর। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন দেশের নির্মাতারা।
আজ চলচ্চিত্র দিবসে এমনই এক সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেসবুকে নিজের এক পোষ্টে এ প্রতিক্রিয়া জানান এ নির্মাতা। দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে নির্মাতাদের নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে পুলিশের প্রতি এ সিদ্ধান্ত তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন-
আসছে দিন, ভালো দিন।
সেখানে সব সিনেমাই হবে 'একটা ভালো ছবি'। সেই ছবিতে ডাক্তার ভালো, রোগী ভালো, প্রেমিক ভালো, প্রেমিকা ভালো, সাংবাদিক ভালো, ফিল্মমেকার ভালো, চোর ভালো, পুলিশ ভালো। সেখানে সবগুলো ছেলের নাম ইতিহাদ আর মেয়ের নাম ইতি। তাদের সবার চরিত্র ইতিবাচক। সবার কথা বলা, কাজ করা সবই সংবিধানসম্মত। তারা ম্যানুয়াল অনুযায়ী ভালো ভালো কথা বলে, ম্যানুয়াল ধরে প্রেম করে, ম্যানুয়াল ধরে বংশবৃদ্ধি করে, ম্যানুয়াল মাফিক চিন্তা করে।
তারপর সব ইতিবাচক দর্শকরা সেই ছবি দেখতে হলে আসে এবং ইতিবাচক আনন্দ লাভ করে। 'থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার' এর পর কিছু মানুষের প্রতিক্রিয়ার উত্তর দিতে এইরকম একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলাম 'ওকে কাট' নামে। আমরা কি ধীরে ধীরে এই রকম শিল্পচর্চার দিকে আগাচ্ছি?
আজকে নোটিশ এসেছে পুলিশ বাহিনীকে নেতিবাচক উপস্থাপন করা যাবেনা। পুলিশ দেখাতে হলে অনুমতি লাগবে। কালকে আসবে সাংবাদিক দেখাতে অনুমতি লাগবে, পরশু আসবে মাছ ব্যাপারী দেখাতে অনুমতি লাগবে, তারপর ডাক্তার-হুজুর-মোক্তার সব কিছুর জন্যই নোটিশ আসবে। কারণ সকলেরই স্পর্শকাতরতা আছে। এরই মাঝে 'ডিরেক্টর' ছবিতে ডিরেক্টরদের নেতিবাচক ভাবে দেখানোয় শুনলাম অনেক পরিচালক স্পর্শে কাতর হয়ে পড়েছেন।
ভাইয়েরা আমার, এই ধরনের নিয়ম এই যুগে খুবই হাস্যকর একটা কাজ হবে। এটা বন্ধ করেন ।
আমাদের পুলিশ ভাইদের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল থাকুক এটা আমরাও চাই। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার ভাবমুর্তি আপনার কর্ম দ্বারা নির্মিত হবে, কোনো নাটক-সিনেমা দ্বারা না। একটু খেয়াল করে তাকান পুলিশ বাহিনীর এক আলোচিত কর্মকর্তা 'মাশরুফ হোসেন'র দিকে। তার এই ভাবমুর্তি বানালো কে? তার কর্ম।
সুতরাং ভাবমুর্তির এইসব আলেকবাজির দিকে না ছুটে, আসেন আমরা কাজে মন দেই। 'ওয়ার্ল্ড অব ফিকশন'কে তার জায়গায় ছেড়ে দেই।
দুনিয়ার মানুষের কাছে নিজেদেরকে একটা অবরুদ্ধ দেশের মানুষ হিসাবে পরিচিত না করি।
(বি:দ্রঃ আমাদের পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ত্রিশ বছর আগের তুলনায় অনেক ভালো । অনেক মেধাবী তরুণ অফিসার আছে এখন সেখানে । বেনজির ভাইকে একজন আধুনিক মানুষ হিসেবে জানি । আগের আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সাহেবকেও আধুনিক মানুষ হিসাবে জানতাম । আমাদের অনেক বন্ধু আছে যাদের অসাধারণ সৃজনশীল ক্ষমতার কথাও জানি। আমার বিশ্বাস এই রকম অদ্ভুত নিয়মের চিন্তা তারা অচিরেই বাদ দিবেন )
(ওএস/এএস/এপ্রিল ০৩, ২০১৫)