পিছিয়ে পড়েছে আ'লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম
স্টাফ রিপোর্টার : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়েছে। মন্ত্রী-এমপিরা প্রশাসনিক ও এলাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দলকে সময় দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ ওঠেছে। তবে এতে তৃণমূল নেতারা বসে নেই। মন্ত্রী-এমপিদের তোষামোদে কে কার আগে যাবেন সে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকার গঠনের পরে নানা ব্যস্তবতার কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে বারবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জনসংযোগসহ কয়েক দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রতিবারই ফ্লপ করেছে। এ জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এমনকি দলের সাতজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদককে ডেকে নিয়ে ধমক পর্যন্তও দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও ফায়দা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে একাধিকবার সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তা আশাব্যঞ্জক হয়নি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দুই দফা সফর কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও তা মাঝপথে থেমে গেছে। ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদ চললেও এখন পর্যন্ত জেলা সম্মেলন করে তৃণমূল কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। বরং অনেক জেলায় অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অধিকাংশ নেতা এখন নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাজেই অধিক সময় দিচ্ছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ বেশির ভাগ নেতাই এখন আর নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে বসার সময় পান না। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসে কয়েক দিন অবস্থান করেও দেখা পান না সাধারণ সম্পাদকের। শেখ হাসিনা নিজে একাধিকবার সিনিয়র নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে বসতে বললেও দু-চার জন ছাড়া অধিকাংশই যাওয়ার সময় পান না।
এদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূলে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়নের কর্মসূচি আংশিকভাবে শুরু করা হলেও তা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। জেলার নেতারা জানান, কেন্দ্র থেকে বারবার কর্মসূচি নেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় নেতারাই তা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, জেলা-উপজেলার নেতারা এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডার, লবিং-তদবির, মন্ত্রী-এমপিদের তোষামোদ, সংবর্ধনার আয়োজন আর তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার কাজেই অধিক ব্যস্ত। ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিংবা দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দেওয়ার মতো সময় তাদের নেই।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সারা দেশে সম্মেলন করে দলকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। পর্যায়ক্রমে জেলা সফরের মধ্যদিয়ে তা কার্যকর হবে।
দলের একটি সূত্র জানা যায়, ২০১১ সালের আদলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আবারও জেলা সফরে যাওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যেসব জেলায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাধান্য, সেসব জেলায় এবার অধিক সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হবে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩, চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ ও রাজশাহী বিভাগের ১টি জেলাকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জেলায় বিদ্যমান তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
(ওএস/এটি/মে ০৯, ২০১৪)