রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সড়ক- মহাসড়কগুলোতে বিরাজ করছে বেহাল দশা। এরমধ্যে রায়পুর- লক্ষ্মীপুর (খুলনা-চট্রগ্রাম হাইওয়ে সড়ক) ও রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়কের বেশীরভাগ স্থানই খানা খন্দে ভরা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে যান চলা চলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেকস্থানে রয়েছে অসংখ্য গর্ত ও অনেক স্থান দেবে গেছে। এছাড়া  উপজেলার অভ্যন্তরিণ সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল ।

গত কয়েক বছরে কয়েকটি দুর্ঘটনায় মারা যান অর্ধশত যাত্রী। অনেকটা মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে এই সড়ক মহাসড়কগুলো। দেবে যাওয়ার অংশগুলো কয়েকটি স্থান দায়সারা ভাবে মেরমত করলেও তা কোন কাজে আসছে না। মেরামতের কয়েকদিন পরই তা আবার দেবে যাচ্ছে।

রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কের ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির প্রায় পুরো অংশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ থেকে হায়দরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত অংশের শোচনীয় অবস্থা। রাস্তার অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এসবের গর্তের কোথাও হাটু আর কোথায় উরু পর্যন্ত গভীর। দেখলে মনে হবে এটি রাস্তা নয় যেন পুকুর। প্রায়ই এসব গর্তে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস-অটোরিক্সা দেবে যায়। এই কারনে সৃষ্টি হয় যানজট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই অঞ্চলের ফসল সয়াবিন, নারিকেল বিভিন্ন শস্য পরিবহন করছে।

কাপিতুলি সড়কের কেএসপি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিচনের রাস্তায় পুকুরের মত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখনে প্রতিদিন দেবে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস আটোরিক্সা ও পণ্যবাহী ট্রাক। এ সড়ক দিয়ে জন প্রতিনিধিরা যাতায়াতের সময় এলাকাবাসী রোষানলে পড়তে হয়। রায়পুর সড়ক থেকে গাজী নগর ও সাবেক এমটি হারুনুর রশিদ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় গর্ত ও উঁচু নিচু থাকায় যানবহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে সড়কগুলো সংস্কারের নামে দায়সারা ভাবে কাজ করা হয়।

রায়পুর-ফরিদগঞ্জ- পানপাড়া সড়কের গর্ত ও ফাটল দেখা দেওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩০ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় অধ্য শতাধিক ব্যাক্তি, আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজারেরও অধিক। সড়ক মহাসড়কের দুরাবস্থা দেখা দিলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

রায়পুর -লক্ষ্মীপুর সড়কের দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মৎস প্রজনন ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র এবং জীনের মসজিদ ও অপরূপ সুন্দর্য মেঘনার তীরবর্তী হওয়ায় এই সড়ক দিয়ে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ চলাচল করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই সড়কগুলোর মধ্যে সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটওয়ারীর রাস্তার মাথা, মাইলের মাথা, নতুন বাজার, হাজির তলা, পূবলাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, মৈশালবাড়ীর সামনে, মিতালী বাজার, হায়দরগঞ্জ বাজার, কাপিলাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, গাজী নগর বাজার, রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে ও খাসের হাট বাজার নামক স্থানে রাস্তাজুরে ব্যাপক গর্ত ও পাটল দেখা দিয়েছে।

দেবীপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তি মাহবুব আলম চৌধুরী বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কটি মেরামতের জন্য এমপি ও চেয়ারম্যানকে বললেও তারা কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অটোরিক্সা চালক ইব্রাহীম বলেন, প্রতিদিন মানুষ এই সড়ক দিয়ে পারা পার হতে ঠিকাদার ও চেয়ারম্যানদেরকে ভোড় চৈতাল বলে। আর দু’দিন পর পর গাড়ীর একটা একটা পার্টস ভেঙ্গে যায়। পরিবহন চালকরা যে কোন সময় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ভুইয়া বলেন, কোন বরাদ্ধ না হওয়ায় সড়কগুলো মেরামত বা সংস্কারের করা যাচ্ছে না। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা আমাদেরকে জানালেও কিছুই করার নেই।

লক্ষ্মীপুর -২ (রায়পুর- সদরের একাংশের) আসনের এমপি মোহাম্মদ নোমান বলেন, সড়কগুলো সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

(পিকেআর/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৫)