রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকের জমি জবরদখলের চেষ্টা চালানো হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিছনে পলাশপোলে তোজামম্মেল হক সরদারের ছেলে মামুন সরদার ও মাসুদ সরদারের নেতৃত্বে এ দখলের চেষ্টা চালানো হয়।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. তপন কুমার কুণ্ডু জানান, জন্মসূত্রে তারা পাটকেলঘাটা থানাধীন খলিশখালির বাসিন্দা। পেশাগত কারণে এখন তারা সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিছনে পলাশপোলে বসবাস করেন। তার বড় ভাই বিমল কুমার কুণ্ডু নড়াইল জেলার লোহাগড়া কলেজের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় সম্প্রতি অবসরে যান। দাদা বিমল কুমার কুণ্ডু ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পলাশপোল মধুমোল্লারডাঙির আব্দুল বারী সরদারের ছেলে আব্দুল অজেদ সরদারের কাছ থেকে ৫৩১৪ নং রেজিষ্ট্রি কোবালামূলে পলাশপোল মৌজার , জেএল ৯৪ , এসএ ২৬৯৬ খতিয়ানের এসএ ১১১৪৭ দাগের ও বর্তমান সেটেলমেন্টের ৮৭১৯ দাগে নকশা উল্লেখ করে ৫ দশমিক ৬১ শতক জমি কেনেন। পরবর্তীতে ওই জমি নামপত্তন করে খাজনা পরিশোধপূর্বক শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখলে আছেন।

অ্যাড. তপন কুমার কুণ্ডু জানান, একই মালিকের কাছ থেকে অ্যাড. তপন কুমার দাস তার স্ত্রী বিজলী রানী দাসের নামে একই তারিখে ৫২৮৪ নং রেজিষ্ট্রি দলিলূলে একই মৌজার ১৪১৬ খতিয়ানের ১৫৬৩০ দাগের ৫ দশমিক ৬১ শতক জমি কেনেন। ওই জমি বর্তমান সেটেলমেন্টে বিজলী রানী দাসের নামে ভুলবশতঃ রেকর্ড না হওয়ায় তিনি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ৩২৯/২০২৫ নং রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। তবে ভুলবশতঃ বিজলী দাসের জমির মধ্যে তিন শতকের একটু বেশি তোজাম্মেল হকের ছেলে মামুন সরদারের নামে রেকর্ড হওয়ায় সম্প্রতি মামুন ওই জমি রেকর্ড মূলে তার দাদা বিমল কুণ্ডুর জায়গা দখলের চেষ্টা করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে ও জেলা আইনজীবী সমিতিতে শালিসি বৈঠকে মামুন ওই জমি হকদার হিসেব প্রমাণ করতে পারেনি।

অ্যাড, তপন কুমার কুণ্ডু জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে তিনি পেশাগত কারণে আদালতে অবস্থান করাকালিন জানতে পারেন যে, মামুন সরদার, মাসুদ সরদারের নেতৃত্বে ৭০/৮০ জন তার দাদার জমি জবরদখলের উদ্দশ্যে তাদের সীমানা পিলার তুলে ফেলে নতুন পিলার বসানোর পাশপাশি বাঁশ দিয়ে একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষনিক সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে অবহিত করেন। পুলিশ ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যেয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের কাগজপত্রসহ থানায় বসাবসির সিদ্ধান্ত দেন। সে অনুযায়ি সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলামের পৌরহিত্যে বসাবসি হয়। সেখানে মামুন সরদারের জমির দাবির অনুকুলে যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসাথে বিমল কুণ্ডুর জমির ভেঙে ফেলা সীমানা পিলার বসিয়ে দেওয়া ও মামুন সরদারের নবনির্মিত পিলার ও বাঁশের কয়েকটি খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য মামুন সরদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও পরে বিমল কুণ্ডুকে নিজের খরচে তার পুরাতন পিলার বসিয়ে নেওয়া ও মামুনের পিলার সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে মামুন সরদার তার দাবিকৃত জমির অনুকুলে ৬৪৬৭/৭৯ নং একটি দলিল উপস্থাপন করলেও তার কোন নামপত্তন, রেকর্ড, খাজনা, দাখিলা দেখাতে পারেননি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, জমির বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া ভাল। এজন্য মামুন সরদারকে জবরদখলের বিষয়ে সতর্ক করে আদালতের মাধ্যমে জমির মালিকানা বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে মামুন সরদার যদি আরো কাগজপত্র সংগ্রহকরে বসাবসি করতে চান তাতেও কারো আপত্তি থাকবে না বলে জানানো হয়।

(আরকে/এএস/এপ্রিল ২৯, ২০২৫)