আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : টানা একযুগ ধরে একই অফিসে কর্মরত থাকার সুবাধে সেবা নিতে আসা জনগনকে জিম্মি করে অর্থ আদায়সহ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তার অভিযোগ রয়েছে তিনজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

ইতোমধ্যে একাধিকবার ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ফলে তাদের অপরাধের কারনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখিত শোকজ দিয়েছিলেন। রহস্যজনক কারণে তারা শোকজের কোন জবাব না দিয়েই বহাল তরিয়তে রয়েছেন। যেকারণে অভিযুক্ত ওই তিন কর্মচারীর খুঁটির জোর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের। অভিযুক্তদের মধ্যে অফিস সহকারী মতিউর রহমান মোল্লা সাত বছর, অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার ১১ বছর ও বিলকিস আক্তার ১২ বছর পর্যন্ত একই অফিসে কর্মরত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী মতিউর রহমান মোল্লা ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট, অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল ও বিলকিস আক্তার ২০১৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর যোগদান করেন।
অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার নিয়মিত কর্মস্থলে না আসা ও বিনা অনুমতিতে কর্মস্থল ত্যাগ করা, সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং ঘুষ নেওয়ার কারণে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন ২০২৪ সালের ৯ মে আমির আলীকে শোকজ করেন। একই অভিযোগে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, মো. সাখাওয়াত হোসেন ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এবং সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর একই অপরাধে আমির আলীকে শোকজ করেছিলেন। রহস্যজনক কারণে তিনি শোকজের কোন জবাব না দিয়ে এখনও বহাল তরিয়তে রয়েছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী মতিউর রহমান মোল্লা গত ৫ আগস্টের পর একটানা ৬৮ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। অস্টম শ্রেণী পাস মতিউরের নিয়োগ হয় নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগ নেতা মতিউর রহমানকে অফিস সহকারী হিসেবে পদন্নোতি দেওয়া হয়। মতিউরের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সকল কাগজপত্রের চিঠিপত্র লেখা কিন্তু তিনি কোন চিঠি লিখতেই পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপর অফিস সহায়ক বিলকিস আক্তারে বাড়ি একই উপজেলাতে হওয়ার কারনে তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা জনসাধারণের সাথে অসদ আচারনের বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না।

অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আমির আলী হাওলাদার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমাকে চারজন ইউএনও শোকজ দিয়েছিলো একথা সত্য। তবে আমি কোন দোষ করিনি। উপজেলার চেংগুটিয়া গ্রামের ডলি আক্তার নামে একজনের কাছ থেকে দুইশ’ টাকা নিয়ে ছিলাম তা ফেরত দিয়েছি। অভিযুক্ত অফিস সহকারী মতিউর রহমান মোল্লা বলেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপির ভয়ে আমি ৬৮ দিন আফিসে আসিনি একথা সত্য। আমি অস্টম শ্রেণী পাস হওয়ায় নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছি। পরবর্তীতে আমার পদোন্নতি হয়েছে। সেবাগ্রহিতাদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।

অপর অফিস সহায়ক বিলকিস আক্তার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি অফিস কর্মচারীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার পূর্বের তিনজন ইউএনও স্যার ওই তিনজনকে শোকজ দিয়েছিলেন। আমিও তাদের নেতিবাচক কাজের জন্য শোকজ দিয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে সেই অফিস কখনও দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব নয়। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০২৫)