দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : ঢাকার ধামরাইয়ের বাসনা নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান (৬৫) ঋণ নিয়ে এ বছর ৮৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। আশা ছিল, এই জমির ধান দিয়েই তার ছয় সদস্যের পরিবারের সারা বছর পার হয়ে যাবে। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের আগুনে পুড়ে গেছে তার জমির সব ধান, দাঁড়িয়ে আছে শুধু ধান গাছ। এখন কিভাবে পরিশোধ করবেন ঋণের টাকা, আর কিভাবেই চলবে তার পরিবার? গতকাল শনিবার পুড়ে যাওয়া ধান ক্ষেত দেখিয়ে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন কৃষক মজিবর রহমান। 

শুধু তিনিই নন, তার মতো বাসনা নয়াপাড়া ও নওগাঁহাটি এলাকার আব্দুল খালেক, আব্দুল মজিদ, আব্দুল লতিফ, কালু মিয়া, হানিফ আলী, রকেট, জিয়াউদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সালামসহ শতাধিক কৃষকের প্রায় ২০০ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষেত ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের আগুনে পুড়ে গেছে।

ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়ে গতকাল শনি ও শুক্রবার কৃষকরা বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। পরে গতকাল শনিবার তিনজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস, তাপস কুমার সরকার ও সুমন হোসেন সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

তবে ধামরাইয়ে যখন ইট ভাটা নির্মাণ হয়,তখন সে জমি ও তার পারিপার্শিক পরিবেশ ইট ভাটা নির্মানে সঠিক স্থান কিনা তা নির্ধারন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা কৃষি অফিস ও তা কর্মকর্তার উপর দাািয়ত্ব রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে এবিষয় এরিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

সরেজমিনে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলায় এক, দুই ও তিন ফসলি জমিতে দুই শতাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ধামরাইয়ের নওগাঁহাটি এলাকার টাটা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের আগুনে বাসনা নয়াপাড়া ও নওগাঁহাটি এলাকার বোরো ধান ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকদের অভিযোগ, গত বুধবার রাতে ওই টাটা ইটভাটার কিলিনে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস রাতের আধাঁরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরই এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে যায়। ওই বাতাস যে দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশেরই ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। এতে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের আগুনে আশপাশের প্রায় ২০০ বিঘা বোরো ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে পরায় তা পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকরা জানান, গত বুধবারও জমির বোরো ধান গাছ সবুজ ছিল। ইটভাটার গ্যাস ছেড়ে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকেই সব ধান গাছ লাল হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।

বাসনা নয়াপাড়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম ও আব্দুল খালেক জানান, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের আগুনে ওই এলাকার প্রায় ২০০ বিঘা জমির ধান পুড়ে এখন শুধুই চিটা হয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস জানান, ইটভাটা মালিক ধান ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

টাটা ইটভাটার ম্যানেজার আব্দুল খালেক তাদের ভাটার গ্যাসের আগুনে কিছু জমির ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। আমাদের ভাটার মালিক আবুল হোসেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা চেয়েছেন। এ বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ইটভাটার আগুনে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্থ ধান ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। এক-দুইদিনের মধ্যে ইটভাটা মালিকরা যদি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ না দেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ডিসিপি/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৫)