শিশুদের টিকা দানের পর মিলছে না টিকা কার্ড, জন্ম নিবন্ধনে বিড়ম্বনা

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : জন্ম নিবন্ধন সনদ না পাওয়া পর্যন্ত যেকোনো শিশুর পরিচয়ের দালিলিক প্রমাণ হলো ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) টিকাকেন্দ্র থেকে পাওয়া ছোট আকারের হলুদ কার্ড। প্রত্যেক শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্যও এই কার্ড অপরিহার্য। কিন্তু ঝিনাইদহের শৈলকুপায় প্রায় ৩মাস ধরে পাওয়া যাচ্ছে না এই কার্ড। এই সময়ের মধ্যে জন্ম নেওয়া অধিকাংশ শিশু এই কার্ড পায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এই হলুদ কার্ড সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে নবজাতকদের অভিভাবক ও ইপিআই টিকাদান কর্মীদের মধ্যে প্রায়ই কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটছে। কেউ কেউ এই কার্ড ফটোকপি করে কাজ চালাচ্ছেন।
টিকাদানে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,কার্ডের সংকটের কারণে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাদা কাগজের স্লিপে লিখে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাদা কাগজেই লিখে দেওয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ। কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সাদা স্লিপটি যেন না হারান, সে নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের ভাষ্য, টিকা কার্ড সব শিশুর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধনের সনদের জন্য কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই তাঁরা ইপিআই কেন্দ্র থেকে শিশুদের দেওয়া টিকার কার্ড দ্রুত সংগ্রহ ও বিতরণের দাবি জানান।
পৌর এলাকার বাসিন্দা মোহন জানান, ‘তাঁর শিশুর বয়স তিন মাস। ইপিআই টিকাদানের পর যে কার্ড দেওয়া হয় তা হাসপাতালে নেই। তাই সন্তানের জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি।’
একই এলাকার রবিউল ইসলাম জানান, ‘তাঁর শিশুর প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্ড পাননি এখনো। হাতে সাদা কাগজে স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর ইপিআই টিকা কার্ড চাওয়া হচ্ছে।’
হাসিবুল্লাহ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘বাচ্চার জন্য কার্ড আনতে গিয়েছিলাম, বলছে কার্ড নেই,ছাপিয়ে এনে দেবে। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে কার্ড দিয়েছে।’
মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিকাদানের পর যে কার্ড দেওয়া হয় তা হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় জনগণের খুবই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তারা পরিষদে জন্মনিবন্ধন করতে এসে ফিরে যাচ্ছে। কার্ড না থাকলে জন্মনিবন্ধন করা সম্ভব না। দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদ আল মামুন বলেন, ‘শৈলকুপায় ইপিআই টিকাদানের কার্ড ফুরিয়ে গেছে, এজন্য মাঠ কর্মীরা চাইলেও দিতে পারছিনা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সরবরাহ না থাকায় এই ভোগান্তি হচ্ছে। কোথাও কোথাও জনভোগান্তি লাঘবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্ড ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দ্রতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঝিনাইদহে নতুন যোগদান করেছি। কার্ড না থাকার বিষয়ে জানা নেই। কাল অফিসে গিয়ে দেখবো, যদি না থাকে তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।’
(এসআই/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৫)