শিতাংশু গুহ


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি হবে? তিনি বললেন, না, হচ্ছেনা। অবাক হলাম, টের পেয়ে তিনি যোগ দিলেন, আর্মীতে একটি কথা আছে, তা হচ্ছে, যখন হম্বিতম্বি হয়, তখন যুদ্ধ হয়না। তারমতে, যুদ্ধ হলে ইতিমধ্যে তা লেগে যেতো। তিনি বললেন, দেখছেন না, পাকিস্তানের মন্ত্রী ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন যে, গত ৩০ বছর তারা অন্যদের পরামর্শে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন? কূটনৈতিক ভাষায় এ কথার অর্থ হচ্ছে, পরোক্ষভাবে দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া! তাহলে ভারত কি করবে? তিনি বললেন, ভারত তো বলেই দিয়েছে, তাঁরা খুঁজে খুঁজে জঙ্গীদের মারবে, কিছু ড্রোন এট্যাক হতে পারে, এমনকি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হওয়া সম্ভব এবং পাকিস্তান কিচ্ছু করবে না বা পাকিস্তানের কিচ্ছু করার নেই? 

আমি যুদ্ধ বিশারদ নই , তিনি যুদ্ধ বিশারদ, এবং ভারতীয় নন, হিন্দুও নন। তার কথায় যুক্তি আছে। তিনি বললেন, ইতিমধ্যে ভারত কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। এগুলো ডিপ্লোমেটিক, জনগণকে শান্ত রাখতে নিতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, পুরো বিশ্ব মোটামুটি ভারতের পক্ষে, আমেরিকা-রাশিয়া তো আছেই, এমনকি ইসরাইল একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতকে সহায়তা দিতে। চীনও বিপক্ষে নয়? ভারতের জনগণ চায় ভারত কঠোর ব্যবস্থা নিক, ভারতবাসী প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। ভারত কি এই সুযোগ হাতছাড়া করবে? তিনি বললেন, এ যুদ্ধে ভারত কি অর্জন করবে? শুধু প্রতিশোধের জন্যে তো যুদ্ধ করা চলেনা। এরচেয়ে বরং সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ভালো!

তারমতে যুদ্ধ হলে ভারতকে হয় পিওকে (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, অথবা বেলুচিস্তান স্বাধীন করে দিতে হবে, বা পাকিস্তানকে টুকরো টুকরো করে দিতে হবে। হয়তো ভারত এগুলো করতে পারে, কিন্তু সেটি তো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ, ভারত কি সেই রিস্ক নেবে? পরমাণু বোমার ভয়? বললেন, পারমানবিকভাবে অনেক শক্তিশালী থাকার পরও সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু ভেঙ্গেছিলো। বললাম, ভারতের বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দিয়েছে, জনগণ চাচ্ছে ভারত একশনে যাক, উত্তর: যাবে, তবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে নয়। ভদ্রলোকের কথায় খুশি হতে পারলাম না, চাচ্ছিলাম ভারত পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দিক।

যুদ্ধ যে হবেনা, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায়না। যুদ্ধের দামামা বাজছে, ভারত প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটি টকশো’তে দেখলাম, একজন বলছেন, ভারতের উচিত পাকিস্তানের পারমানবিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়া। আবারো বলতে হয়, সেটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এবং ভারত সেটি করতে সমর্থ হলে, সবগুলো পরাশক্তি খুশি হবে। এটি সত্যি ভারত যদি পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে দেয় তাতে ‘ইসলামী সন্ত্রাস’ অনেকাংশে কমবে, কারণ পাকিস্তান হচ্ছে সন্ত্রাসের আঁতুর ঘর। পশ্চিমবাংলার নিউজ২৪বাংলা টিভি বলছে, পেহেলগামে সন্ত্রাসী আক্রমণের সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকায়? হামাস নাকি জড়িত? ড: ইউনূসের প্রশ্রয়ে ঢাকা এখন সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য। তেমনটা হলে ড: ইউনূসের খবর আছে!

তবে সেনাপ্রধান এক ভিডিও বার্তায় কাশ্মীরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ভারতের পাশে থেকে একাত্তরের ঋণ কিছুটা শোধ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভারতীয় অভিযানে লস্কর-ই-তৈবা’র শীর্ষ নেতা আলতাফ লালি নিহত হয়েছেন। ভূস্বর্গ কাশ্মীর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে, জাতিসংঘ মহাসচিব ‘সর্বোচ্চ ধর্য্য’ ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। ভারতের হিন্দু মনে করছে এটি ‘হিন্দু জেনোসাইড’, হিন্দুদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ। কুম্ভমেলার পর কাশ্মীরে হত্যাযজ্ঞ হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। এ ঘটনার পরও যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র ধর্য্যের বাঁধ না ভেঙ্গে থাকে, তবে যেমন একজন কলকাতাবাসী জানালেন, ভারতবাসী হয়তো সামনে যোগীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাইবেন।

এদিকে উত্তরাখণ্ডে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কাশ্মীরী মুসলমানদের উত্তরাখন্ড ছাড়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে বলা হয়, একের পর এক হিন্দু নিধনের ঘটনা হচ্ছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানে হিন্দু নিধন হচ্ছে, বারবার আমাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, আমরা আর কতকাল শান্ত থাকবো? ভারতের মুসলমানরা এবার পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে হিন্দুদের পক্ষে রাস্তায় নামছেন। ভারত-পাকিস্তানের নায়ক-নায়িকারা ‘আমরা লজ্জ্বিত, হিন্দু লাইফস মেটার্স’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করছেন। কলকাতার একজন মুসলিম শিক্ষক লজ্জ্বায় ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিভিতে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। বাংলাদেশের তৌহিদী জনতা অবশ্য পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, ভারতের উচিত অন্তত: এদের শহীদ হওয়ার সুযোগ করে দিতে পাকিস্তানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।