রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানী ঢাকার মিরপুরে 'বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড' নামের একটি সমবায় সমিতির দখলে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে কিছু দুর্বৃত্ত। ঢাকা জেলার কয়েকজন সমবায় কর্মকর্তা, কয়েকজন ওই সমবায় সমিতির সদস্য এনং ওই সমবায় সমিতির কোনো সদস্য নন এমন এক দুর্বৃত্তের যোগসাজশে সমবায় সমিতিটি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভুয়া রাজনৈতিক পরিচয় লাগিয়ে দিয়ে মব সিস্টেমে সমিতিটি দখলের নীল নকশা করেন ওই সমিতির সদস্য এসএম দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন এবং ওই সমিতির কোন সদস্য নয় এমন এক বহিরাগত দুর্বৃত্ত জনৈক ওসমান গণি গং। এদিকে, ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেনে ঘোষিত ওই এডহক কমিটির আগে ঢাকা জেলা সমবায় অফিস থেকে একাধিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে একাধিক তদন্ত  করা হলেও সমিতি বা সমিতির কমিটির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনিয়মের কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি বলে দাবি করেন বাচ্চু। এরপর গত ৫ জানুয়ারি (২০২৫) তারিখে ওই সমবায় সমিতির নির্বাচিত বৈধ কমিটিকে সমবায় সমিতি আইন ২২(১) ও ২২(২) ধারায় নোটিশ না দিয়ে কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে।  কিন্তু পরে ওই অবৈধ এডহক কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সমিতির নির্বাচিত কমিটির করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এডহক কমিটিটি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ওই দুর্বৃত্তের দল মিথ্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে, সমবায় অফিসের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা মহলের তদবিরের চেষ্টা করে এবং মিথ্যা পলিটিক্যাল ট্যাগ লাগিয়ে সমিতি দখলের সব ধরণের হীন অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরও তারা মোটেও ক্লান্ত হয়নি! বরং অরাজনৈতিক একটি ঐতিহ্যবাহী সমবায় সমিতিকে দখল করতে বর্তমান নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে শেষ অস্ত্র হিসেবে চালাচ্ছেন মিডিয়া ট্রায়াল। এতে গুটি কয়েক সাংবাদিককে হাত করে ওই সন্ত্রাসীরা পতিত সরকারের দোসরদের নেপথ্য সহযোগিতায় ও হীন স্বার্থ হাসিলের অসৎ উদ্দেশ্যে বর্তমান নির্বাচিত কমিটির নামে মিথ্যা, বায়োনাট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই সমিতির বর্তমান নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন বাচ্চু।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন বাচ্চু উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'গত ২৩ এপ্রিল 'দৈনিক বর্তমান কথা' ও 'দৈনিক আজকের বাংলা' নামক দুটি পত্রিকায় একই শিরোনাম ও একই স্ক্রিপ্টে আমার ও আমার সমিতির নামে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মনগড়া তথ্য সম্বলিত লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যা সম্পুর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও অসাধু উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে স্পষ্টত মনে হয়েছে। তাছাড়া আমি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়া শর্তেও আমাকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সমবায় সমিতিতে দায়িত্ব থাকাকালীন সমিতিটির উন্নয়নে সর্বোচ্চ সততা, জবাবদিহিতা ও সরকারি নিয়ম-নীতি ও গঠনতন্ত্র মেনে সাধারণ সমবায়ীদের স্বার্থ নিশ্চিত করে কাজ করেছেন জানিয়ে বাচ্চু আরো জানান, 'যেসব তথ্য দিয়ে ওই সংবাদটি একই শিরোনামসহ দুটি সংবাদপত্রেই হুবহু কপি পেস্ট প্রকাশ করা হয়েছে, সেটির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই সম্পর্কে কিছু বলতে ইচ্ছে না হলেও কিছু মিথ্যাচারের জবাব না দিলেই নয়।

তিনি জানান, 'আমার স্পষ্ট কথা হচ্ছে- প্রথমত: আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে কোনোদিনও সম্পৃক্ত ছিলাম না, এখনও নাই। দ্বিতীয়ত: ওই প্রকাশিত সংবাদ একটি কাল্পনিক দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যার নিন্দা জানাচ্ছি। তৃতীয়ত: আমি ধীরে ধীরে স্পষ্ট বুঝতে পারছি 'কারা' এবং 'কেনো' এই সমবায় সমিতিটি দুর্বৃত্তয়ানের মাধ্যমে অবৈধভাবে দখল করে গিলে খেতে চাচ্ছেন।'

বিষয়টি স্পষ্ট করতে বাচ্চু আরো জানান, 'দেলোয়ার ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার এই সমবায় সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সমিতিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজধানীর একটি থানায় হত্যা মামলার একজন এজাহার নামীয় আসামীও তিনি। দেলোয়ার পরপর তিনবার নির্বাচিত হন, পরে সমবায় সমিতির নীতিমালা অনুযায়ী একবারের জন্য নির্বাচন করার সুযোগ বঞ্চিত হন দেলোয়ার। কিন্তু সেই ধৈর্য্যটুকুও যেনো হারিয়েছেন দেলোয়ার। তিনি এতোটাই ধৈর্য্যহারা হয়েছেন যে, বহিয়াগত ও দুষ্কৃতকারীদের সাথে নিয়ে সমবায় সমিতিটি অবৈধভাবে দখলের প্রতিনিয়ত পায়তারা করে যাচ্ছেন।'

বর্তমান নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু আরো বলেন, ''তাঁর অতীত ইতিহাস আলোকপাত করার প্রয়োজন রয়েছে, যে ইতিহাস হয়তো বর্তমানের অনেক সমবায়ী সদস্যই জানেন না অথবা ভুলে গেছেন কেউ কেউ। গত ২০০৬ সালের ১৪ মে তারিখে 'মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড' এর সাথে 'নর্দান রিয়েল স্টেট' নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে ৮ কোটি টাকা সাইনিং মানি নিয়েছিলেন এসএম দেলোয়ার হোসেন গং। যার কোনো হিসেব বা বৈধ নথিপত্র সমিতিতে নেই। সমিতির সাধারণ সদস্যদের বঞ্চিত করে তিনি সমবায় সমিতির পুরো ৮ কোটি টাকাই আত্মসাৎ করেছিলেন ওইসময়।'

তিনি জানান, দেলোয়ার হোসেনের মিরপুর-১৩ তে একটি ৪ ইউনিট বিশিষ্ট ৬ তলা আধুনিক ভবন ও একটি ১০ তলা ভবন রয়েছে। এছাড়া মিরপুর জল্লাদ খানার পাশে একটি বহুতল গার্মেন্টস রয়েছে। তার আয়ের উৎস কি, এবং কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা তদন্তের দাবি রাখে।

এদিকে, এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও সমবায়ী এসএম দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ওই সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু জানান, বাংলাদেশ সরকারের সমবায় সমিতি আইন ও সমিতির গঠনতন্ত্রের অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে সমিতি পরিচালনা করেও যদি দুর্বৃত্তায়নের শিকার হতে হয়, তবে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।'

তিনি বলেন, আমি গত ২০১২ সাল থেকে পরপর তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সমিতির নিয়ম মেনে একবার গ্যাপ দিয়ে পুনরায় ২০২৩ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। আর সমিতির মাসিক এক সভায় সাধারণ সমবায়ীদের সর্বসম্মতিক্রমে অস্থায়ী বাসা নং- ১/১৩, বড়বাগ, মিরপুর-২, ঢাকা ঠিকানায় অফিস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর । তখনকার সমিতির পরিস্থিতি, সময়ের বিবেচনাসহ বেশ কয়েকটি কারণে সমিতির বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধাণ্য দিয়ে অস্থায়ী অফিস ভাড়া নেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ সমবায়ীরাই নিয়েছিলেন সেদিন, আমি নই। তারপর এক যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। এতোদিন এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি, অভিযোগ বা আপত্তিও করেননি। কিন্তু কয়েকজন সাংবাদিকদের দিয়ে করানো ওই দুইটি প্রত্রিকায় একই দিনে, একই শিরোনাম ও একই স্ক্রিপ্টে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত লেখায়- ওই বাড়িতে অফিস থাকাকেও অপরাধ বিবেচনা করে বর্ণনা করা হয়েছে। অফিস ঘিরে বানানো হয়েছে কাল্পনিক গালগল্প, মিথ্যা রঙের তুলিতে আঁকা হয়েছে ষড়যন্ত্রের ডালপালা।

বাচ্চু আরো বলেন, ওসব মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করে 'মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড' এর সাধারণ সদস্যদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ দিবেন না সমবায়ীরা। মামলা, হামলা বা মিথ্যা তথ্য সন্ত্রাস ছড়িয়ে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে গণমানুষের প্রতিষ্ঠানকে কেউ অবৈধ দখলের হাতিয়ার বানাতে চাইলে সমবায়ীরা তা মেনে নিবে না। এমনটি কেউ ভাবলেও তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন বলেই আমি মনে করি।

এছাড়া তিনি আরো বলেন, 'আমি নাকি মার্কেট বানিয়ে জনৈক রাজনৈতিকের সাথে নিয়ে দুর্নীতি করেছি, বলা হয়েছে। মূলত: এর থেকে বড় মিথ্যাচার আর হতে পারেনা। সম্পুর্ণ অরাজনৈতিকভাবে পরিচালিত, নির্দিষ্ট সংগঠিত সমবায়ী জনগোষ্ঠির সুচিন্তিত মতামত ও সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে নিয়ে এমন ডাহা মিথ্যাচার নিন্দনীয়ই বটে।'

বাচ্চু বলেন, 'দেশের যে কোন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের হিসেব-নিকেশ, সাফল্য-ব্যর্থতা ওই সমিতির মাসিক সাধারণ সভা এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিোএম)-এর মাধ্যমে সকল সদস্যের সামনে পেশ করা হয়। কারো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সমিতির যে কোনো সদস্যই তা লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন, আপত্তি কিংবা মতামত জানাতে পারেন, অগ্রাঅিকার ভিত্তিতে তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আবার, কেউ দুর্নীতি করলে তা সরকারিভাবেই ওডিট করার সুযোগ থাকে। আয়-ব্যায়ের হিসেবে গড়মিল হলে তা সুস্পষ্ট ফুটে উঠে। সুতরাং, যারা বাইরের থেকে আসা দুষ্কৃতিকারি তাদের কিছু বলতে চাইনা; তবে, আমাদের সদস্যদের মধ্যে যারাই এর সাথে জড়িত আছেন, তাদের প্রতি বিণয়ের সঙ্গে এই সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জানাতে চাই- আপনি, আমি ও সাধারণ একজন সমবায়ীর মধ্যে পার্থক্য খুঁজবেন না প্লিজ। তাঁদের বঞ্চিত করে সমিতি দখলের অসৎ চিন্তা ভাবনা একাবারে বাদ দিন।'

সমবায়ী সদস্য এসএম দেলোয়ার হোসেনকে ইঙ্গিত করে বাচ্চু আরো বলেন, 'আপনার মতো হয়তো আমি বা আমরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে চারশতের অধিক সংখ্যার নিজস্ব লোকজনকে নতুন সমবায়ী সদস্য বানাই নাই, তবে পুরাতন সাধারণ সমবায়ীদের রক্ত-ঘামে গঠিত 'মিরপুর বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড' আজ এতোদূর এসেছে। ওসব সাধারণ সদস্যদের হক বঞ্চিত করে অবৈধভাবে কোনো অসাধু দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে এই সমিতি দখলে নেওয়ার সুযোগ অতি নগণ্য। এটা ফুটপাতের কলা-রুটির দোকান নয়।'

তাঁর বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করা সাংবাদিক ভাইদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বাচ্চু বলেন, কোনো অসাধু ব্যক্তি বা চক্রের ষড়যন্ত্র এমন মিথ্যাচার করে কপি-পেস্ট নিউজ থেকে দয়াকরে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। জনস্বার্থ ও সঠিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রমাণের নিরীক্ষে সংবাদ প্রকাশ করলে আমরা উপকৃত হই। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ব ও সমাজের পরিচ্ছন্ন দর্পন বিবেচনা করে জনগণ আপনাদের চোখেই এই সমাজকে দেখেন, রাষ্ট্রকে জানেন, বুঝেন। বৃহত্তর জনস্বার্থ, সততা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা মাথায় রেখে মুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করতে চাই।

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২৫)