তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সেই সাথে পুষ্টির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পার্টনার প্রকল্পের আওতায় অনেক কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে। তাই আমাদের প্রধান খাদ্য ভাতের মাধ্যমে মানুষের দেহের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে উচ্চ প্রেটিন সমৃদ্ধ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির একটি বালাম  ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৭ উচ্চ প্রোটিন ও অ্যামাইলোজ সমৃদ্ধ। এ ধান থেকে তৈরি চালের ভাত খেলেই  শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যাবে। এ বছর  গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহযোগিতায় ২০টি প্রদর্শনী প্লটে ব্রি ধান১০৭ চাষাবাদ করেন ২০ জন কৃষক।  

ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান ড. আমিনা খাতুন এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্রি ধান১০৭ এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.৩ ও প্রোটিনের পরিমাণ ১০.২। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো মৌসুমের জাত। এছাড়া জাতটিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত যে কোন জাতের চেয়ে অনেক কম।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গত বছরের জানুয়ারীতে মাঠ পর্যায়ে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয় উচ্চ প্রেটিন সমৃদ্ধ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ব্রিধান১০৭। এ বছর প্রথম কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদে গোপালগঞ্জে এ জাতের ধান হেক্টরে ৮.৭৫ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। ধানটির জীবনকাল ১৪৮ দিন। ভাল পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশ পেলে এ জাত হেক্টরে ৮.১৯ থেকে ৯.৫৭ মেট্রিক টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন।

ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রোমেল বিশ্বাস বলেন, ব্রি ধান১০৭ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ নতুন ধানের জাত। গোপালগঞ্জে এ জাতটির প্রথম চাষাবাদে কৃষক প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছেন। খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করবে এ ধান। এ চালের ভাত খেয়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী পুষ্টি পাবে। পুষ্টিহীনতা দূর করতে এ ধান ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।এছাড়া খোরপোষের কৃষিকে নতুন এ ধান বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর ঘটাবে।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার পিত্তলপাড়া গ্রামের কৃষক জেবিআর হালদার বলেন, আমি সাধারণত হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করি। হেক্টরে এ ধান সাড়ে ৮ টন ফলন দেয়। কিন্তু এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি প্রোটিন সমৃদ্ধ ব্রি ধান১০৭ আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৮.৭৫ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছি। এ জাত হাইব্রিডের মতো ফলন দিয়েছে। রোপনের ১৪৮ দিনের মাথায় ধান ধরে তুলতে পেরেছি। অধিক ধান উৎপাদন করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের ভাল ফলন দেখে প্রতিবেশি কৃষকরা এ ধানের আবাদ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

একই গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ ঘোষ বলেন, ব্রি ধান১০৭ চাষ করেছি। ধান হেলে পড়েনি। রোগ বালাই হয়নি। ফলনও হাইব্রিডের সমান পেয়েছি ।ধান উৎপাদনে হাইব্রিডের তুলনায় খরচ কম হয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এ বালাম ধান বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা যায় ।তাই এ ধান চাষ করে আমি লাভবান হয়েছি।

ওই গ্রামের ব্রি ধান১০৭ চাষাবাদকারী নূর ইসলাম শেখ বলেন, এ জাতের ধান আবাদ করে আগামী বছরের জন্য বীজ সংরক্ষণ করা যায়। এতে বীজ ক্রয়ের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়। আগামী বছর আমি এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি করব।

ব্রি ধান১০৭ আবাদ সম্প্রসারিত হলে জেলাবাসীর প্রোটিনের চাহিদা পুরন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, এ ধানের তৈরী চালের ভাত খেলে শর্করার সাথে হাই প্রোটিন পাওয়া যাবে। এছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল। তাই আমরা গোপালগঞ্জে ব্রি উদ্ভবিত ধান চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছি। ব্রি’র ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এটি আমাদের কৃষির অন্য সুখবর।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২৫)