স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় : বাংলা নববর্ষ ১৪৩২বঙ্গাব্দ উপলক্ষে  বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পঞ্চগড়ে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী লোকনাট্য উৎসব ২৩ এপ্রিল বুধবার সন্ধা সাড়ে সাতটায় শুরু হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ৫কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সবুজে -ঘেরা লাঠুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

এই উৎসবের উদ্বোধন করেন পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)এস এম ইমাম রাজী টুলু। ভূমিজ নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার সরকার হায়দার এর সঞ্চালনায়, স্বাগত বক্তব্য রাখেন পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন।

এসময় মঞ্চে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় বিদ্রোহী থিয়েটার ও ষড়ঋতু জগদল এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নাট্যকার রহিম আব্দুর রহিম, দিশারা নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার মোঃ রফিকুল ইসলাম সরকার, তরুণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব সরকারসহ জেলার বিভিন্নস্তরের নেতৃস্থানীয় সুধিজনরা।পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত উৎসবের উদ্বোধনী দিনে পরিবেশিত হয় দেবীগঞ্জ তৃপ্তি নাট্যগোষ্ঠীর হুলির গান 'প্যাচকেটার সংসার’।

পুলিন চন্দ্ররায় পরিচালিত পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত পালায় শ্রেষ্ঠাংশের নারী চরিত্রে অভিনয় করেন, ৪০ উর্ধ্ব ৪সন্তানের জনক সুকুমার, ৩৫উর্ধ্ব ৩সন্তানের জনক জগদীশ এবং প্রায় ৭০ বছর বয়ষ্ক ৪ ছেলে মেয়ের বাবা অতুল চন্দ্র।অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন বুদ্ধচরণ,কলিন ও পুলিন। যন্ত্রাংশের ক্যাচিওতে টগর রায়,ফ্লুট বাঁশিতে মহাদেব রায়,কংগোতে মনোরঞ্জন ও মন্দিরায় রনজিৎ রায়। হুলির কাহিনীও মজাদার,' স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালই চলছিল, নেই তাদের সন্তানাদি, অভাবি সংসারে স্বামী চিন্তা করলো, ঢাকায় কাম কাজ করে আয় রোজগার করে সংসার চালাবে, যেই কথা, সেই কাজ। সিদ্বান্ত হলো ঢাকায় যাবার,কিন্তু তার স্ত্রী সঙ্গে যাবার বায়না ধরলো,কিন্তু তাকে নিতে রাজী নয় স্বামী প্যাচকেটার,কারণ তার উদ্দেশ্য ভিন্ন।

ঢাকায় যাবার পথে, এক বাজারে দেখা হয় মুড়ি বিক্রেতা এক সুন্দর সুশ্রী যুবতীর সাথে। সেখানেই তাদের মন দেওয়া নেওয়া। প্রেমের উসিলায় বিয়ে, এরপর বাড়ি ফেরা।একেতো অভাব, তারপর দুই বউয়ের সংসার পরিচালনার নানা কাহিনী নিয়েই হুলিরগান 'প্যাচকেটার'। সন্ধ্যারাতে অনুষ্ঠিত উৎসবে চতুরপাশের গ্রাম থেকে উঠে এসেছে হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু কিশোর, বয়োঃবৃদ্ধ, তরুণ তরুণীরা।আসর ঘিরে লোকারণ্য।কথা হলো দর্শক মোছাঃরোকিয়া খাতুন(৬৫) এর সাথে, তিনি রাজারপাড় ডাঙ্গা থেকে এসেছেন সাথে নাতিপুতিরাও রয়েছেন,তিনি বলেন আমরা গরীব মানুষ, অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই,বাড়িতে টেলিভিশন, রেডিও নেই,এই গানই আমাদের আনন্দ দেয়।লাঠুয়াপাড়ার রমিছা খাতুন (৭৫) তিনি বলেন, ছোট বেলায় এই ধরণের গান অনেক শুনেছি, অনেক দিন হলো শুনতে পাই না। আজ ভাল লাগছে, প্রাণটা ভরে যাচ্ছে।

আনোয়ার (৩৫), রোজী বেগমের একই কথা।সপ্তম শ্রেণির রাইসা (১৩)এসেছে শহরের পুরাতন ক্যাম্প এলাকা থেকে; এই মেয়ে পড়াশোনা করে হাজী ছফির উদ্দীন গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজে, গান হবে এই সংবাদ পেয়ে সে চলে এসেছে তার নানীর বাড়ি,এরপর নানী, মামীসহ সবাই পালা আঙ্গিনায়।

তিনি বলেন, এই প্রথম এই ধরণের গান শোনা। খুবই মজা পাচ্ছি।খালি শোনতেই ইচ্ছা করছে।অষ্টম শ্রেণির বাপ্পী,আব্দুর রহমান জেহাদির একই কথা। ৯৪ বছর বয়ষ্ক রাজারপাড় ডাঙ্গার মোতালেব আলী বলেন, সমাজের সত্য কাহিনী নিয়ে হুলির গান শুধু মজাই দেয় না, জ্ঞানও অর্জন হয়।পুরুষরা নারী সেজে অভিনয় করে, নাচ গান করে, এতো বহু পুরনো দিনের কথা আধুনিক যুগে তার যে কদর, আদর চাহিদা তা বুঝা গেছে লোকনাট্য উৎসব আঙ্গিনা লাঠুিয়াপাড়ায়। হাজার মানুষ, পিনপতন নীরবতায় শোনছে কাহিনী, দেখছে অভিনয়, নাচ।আজ ২৪এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধায় পরিবেশিত হবে হরিগুরু সম্প্রদায়, আটোয়ারীর ধামের গান ‘বাবার শেষ বিয়ে’।

উৎসবের সমাপনী দিবস ২৫ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফকির সমে আলী সম্প্রদায়ের পরিবেশনা সত্যপীরের গান ‘বাহরাম বাদশা’।

(এআর/এএস/এপ্রিল ২৪, ২০২৫)