আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : সময় বদলালেও বদলায়নি কিশোর গ্যাংয়ের দাপট। বিগত ৫ আগস্টের পর রাতারাতি ভোল্ট পাল্টিয়ে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় তারা একের পর এক অপর্কম অব্যাহত রেখেছে।

থানা পুলিশ ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় তারা বীরদর্পে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। সর্বশেষ জেলার হিজলা উপজেলার দুর্ষর্ধ কিশোর গ্যাংয়ের হামলার স্বীকার হয়েছেন দুই স্কুল ছাত্র। হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার একপর্যায়ে ভূক্তভোগী দুই স্কুল ছাত্র প্রানবাঁচাতে মেঘনা নদীতে ঝাপ দিয়েও রক্ষা পায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার তুলাতলী মৌলভীরহাট নামক এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় কিশোর গ্যাং প্রধান নাবিল ফকিরের নেতৃত্বে মিরাজ, রাহাত, বাদল, আবির, তানজিল, মারুফ, ইয়াসিন, সিয়াম, নিবির, আশিক, শাওনসহ প্রায় শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ছত্র ছায়ায় কিশোর নাবিল ও তার সহযোগিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন খানের ছেলে নিশাত (১২) এবং কাউরিয়া গ্রামের মো. ওমর (১৪) নামের দুই ছাত্র স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলে, পূর্ব বিরোধের জেরধরে নাবিল ও তার সহযোগিরা উপজেলার মৌলভীরহাট লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বসে তাদের দুইজনের ওপর হামলা চালায়। এসময় প্রাণবাঁচাতে তারা দুইজনেই মেঘনা নদীতে ঝাপ দেন। এসময় গ্যাং প্রধান নাবিল ও তার সহযোগিরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের লক্ষ্য করে অসংখ্য ইট ছুড়তে থাকে। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের দুইজনকে নদী থেকে উদ্ধারের পর পুনরায় তাদের ধাওয়া করা হয়।

এসময় দিশেহারা হয়ে তারা দৌড়ে পাশ্ববর্তী কাশিমুল উলুম মাদরাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। ওইসময় মাদরাসার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা তাদের লাইব্রেরীর মধ্যে আশ্রয় দিয়ে বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, সু-কৌশলে মাদরাসার লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে তাদের বেধম মারধর করা হয়। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সটকে পরে। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। ভূক্তভোগীদের পরিবারের দাবি, হামলাকারীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করতে তারা সাহস পাচ্ছেন না।

অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত নাবিলের বড় ভাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা নাহিদ ফকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদকর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, যা পারেন তাই করেন। সূত্রমতে, নাবিলের বাবা কবির ফকির উপজেলার গুয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাবার দাপটে নাবিল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এবার নাবিলের চাচা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দাপটে সে তার কিশোর গ্যাংয়ের বাহিনী পরিচালনা করছে।

সার্বিক বিষয়ে হিজলা থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে কেউ এখনও থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি। তারপরেও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২৫)