ধামরাইয়ে চরক পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চৈত্র সংক্রান্তি

দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী চরক পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে চৈতালী পূজা ও তার ৬ দিন ব্যাপী মেলা উৎসব। মঙ্গলবার ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ি ঐতিহ্যবাহী মাধব শশুরালয় মন্দির মাঠে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে চরক পুজা সম্পন্ন হয়েছে। গত ০৮ এপ্রিল থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে।
চরক পূজার সময় মেলাঙ্গনে মহিলাদের ওলু ধ্বনিতে ও হাজারো দর্শকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠে মেলাঙ্গন। উপচে পড়া ভক্ত দর্শকদের উপস্থিতিতে পিঠে লোহার বরসী বিধিয়ে নিতাই সহ দুই পুজারী শুন্যে ঘুরেন। হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ এসময় কলা চিনি ফুল ফল ছিটিয়ে দিয়ে মনো বাসনা পুর্নাথে প্রার্থনা করে উপস্থিত ভত্তরা।
মেলাঙ্গনে বসেছিল বিভিন্ন ধরনের গ্রামীন ষ্টল। এসময় অনেক ভক্ত তাদের নানান মানতি রক্ষা করেন ও তাদের শিশু সন্তানদের মহাদের দেবতার উদ্যোশে শূন্যে ঝুলন্ত পুজারী নিতাইয়ের কাছে দিয়ে ঘুরানো হয়।কতিথ আছে ভগবান শিব মহাদেবের কাছে যে যা মানত করেন তা এই দিনে পুর্ন হয়।
এ উৎসব গত ০৮ এপ্রিল থেকে আয়োজন করে ধামরাইয়ের বিভিন্ন মন্দিরের উদ্যোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। চৈত্র সংক্রান্তি ১৩ এপ্রিল ভোরে, নৃত্য করে করে শশ্মানে আসে দেবী কালী রুপী পুজারী। পূজা শেষে একই ভাবে বিভিন্ন পথ প্রদক্ষিন করে স্ব স্ব মন্ডপে মন্ডপে ফিরে যায়। এসময় ভক্ত হাজারো নারী পুরুষের ঢল নামে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়কের দুপাশে । পর দিন ১ লা বৈশাখ ১৪৩২ বিকেলে পৌর শহরের যাত্রাবাড়ি মাধব মন্দির মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এই চরক পূজা। এই চরক পুজার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন কান্দিকুলের নিতাই সরকার।
তবে কায়েত পাড়ার বটতলা মেলাঙ্গনে চার শত বছরে পূরোনো সেই বট গাছটি কয়েক বছর পূর্বে কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অনুষ্ঠান আয়োজনে চরম বির্পজয় ঘটে।ধামরাইয়ের সাবেক পৌর মেয়র দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু সেই বট গাছটি কেটে ফেলেছেন।সেই থেকে চরক পুজা অনুষ্ঠিত হয় বটতলা ছেড়ে প্রতি বছর ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মাধব মন্দির শশুরালয় মাঠে, ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়।
পুজারী নিতাই সরকার বলেন, এই চরক পূজা উৎসবটি বান রাজার আমলে শুরু হয়। আমরা শত শত বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে পালন করছি। দেশ ও জনগনের মঙ্গল কামনায় আজ এই উৎসবটি শান্তি-পুর্নভাবে শেষ হয়েছে বলেন।
মঙ্গলবার ১৪৩২ বাংলা নববর্ষ (১৫/০৪/২৪) বিকেলে প্রায় ৩০ ফুট একটি খুটির উপর একটি লম্বা বাঁশ স্থাপন করে পূজারীরা। তার পর এক পাশে এক পূজারী নিতাই সরকার কে লোহার বর্শী পীঠে বিধিয়ে রশিতে ঝুলিয়ে অপর প্রান্ত থেকে কয়েক জন পূজারী দ্বারা ঘুড়ানো হয়।
এসময় হাজারো নারী-পূরুষ ও আগত ভক্তদের উলুধ্বনিতে মেলা ও উৎসবস্থল মূূখরিত হয়ে উঠে।
চৈতালী পূজা উৎসব উপলক্ষে এবার ধামরাইয়ে বিভিন্ন স্থানে ২০টি পূজা মন্ডপের পক্ষ থেকে এ উৎসবের আয়োজন করে। প্রতিটি পূজা মন্ডপের ২০ থেকে ৪০ জন পূজারী আমিষ হীন খাদ্য ও ফল খেয়ে ্উৎসবের এ কয় দিন অতিবাহিত করেন।
পূজারীরা স্ব-স্ব মন্ডপ থেকে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে বিবিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী,বাড়ী গিয়ে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা, বাশিসহ বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে ধর্মীয় নাচ, গান করে চাল ডাল সহ অর্থ সংগ্রহ করে পুজারীরা।
গভীর রাতে মন্ডপে ফিরে ফল ও নিরামিষ খাদ্য গ্রহন করে মন্দিরেই রাত্রি যাপন করে থাকে উৎসবের এ কয় দিন। ১৩ এপ্রিল ভোরে অনুষ্ঠিত হয় “হাজরা” পূজা, কালি দেবতার সাজে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘন্টার তালে তালে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নৃত্য করে করে শশ্মানে আসে পূজারী সহ শত শত ভক্ত ও আগত দর্শনার্থীরা। পূজা শেষে একই ভাবে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক পথ প্রদক্ষিন করে মন্ডপে ফিরে যায়। এসময় হাজার হাজার নারী পুরুষ অংশ গ্রহন করে।
(ডিসিপি/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২৫)