আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হওয়ায় বেশ কিছু বিরল খনিজ পদার্থ ও চুম্বক দেশটিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে চীন। পেন্টাগন এবং প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা চীনে খনন বা প্রক্রিয়াজাত করা চুম্বক এবং বিরল মাটির খনিজ পদার্থের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে চীনের এমন পদক্ষেপের কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারে মার্কিন সামরিক কর্মসূচি।

বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো ইঞ্জিন চালু করতে এবং জরুরি শক্তি সরবরাহের জন্য চীনে খনন করা বা প্রক্রিয়াজাত করা বিরল মাটির খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি চুম্বকের প্রয়োজন হয়।

সেনাবাহিনীর পছন্দের তালিকায় থাকা নির্ভুল-নির্দেশিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে চীনা বিরল আর্থ উপকরণযুক্ত চুম্বক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া নতুন বৈদ্যুতিক এবং ব্যাটারি চালিত ড্রোন, কম্প্যাক্ট বৈদ্যুতিক মোটরে বিরল চুম্বকের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

শিল্প ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তীব্র শুল্ক বৃদ্ধির পাল্টা প্রতিশোধ নিতে চীনের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি সতর্কীকরণ।

চীনে সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত ছয়টি ভারী বিরল আর্থ ধাতুর পাশাপাশি ৯০ শতাংশ বিরল আর্থ চুম্বক রয়েছে যার ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদিত হয়। এজন্য এখন থেকে বিশেষ রপ্তানি লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে বলে ঘোষণা করে বেইজিং পেন্টাগনকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, মার্কিন অস্ত্রের একটি বিস্তৃত অংশ আসলে চীনের ওপরই নির্ভরশীল।

চীনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসেলিন বাসকরণ বলেন, এই সিদ্ধান্ত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের এসব বিরল খনিজ পদার্থ মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে। যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং লেজারে ব্যবহারের জন্য এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক তৈরি করতে পারে। উচ্চ-তাপমাত্রার জেট ইঞ্জিন আবরণের জন্য ইট্রিয়াম প্রয়োজন; এটি টারবাইন ব্লেডের ওপর তাপীয় বাধা আবরণ স্থাপন করে মাঝ আকাশে বিমানের ইঞ্জিনের গলে যাওয়া প্রতিহত করে।

আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্পে মহাকাশ এবং অস্ত্র কোম্পানিগুলোর কাছে এসব বিরল খনিজের ছোট ছোট মজুত রয়েছে। প্রতিরক্ষা শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর নয় বরং কয়েক মাসের জন্য তাদের চাহিদা মেটাতে এগুলো যথেষ্ট। এক কর্মকর্তা বলেন, পেন্টাগনের কাছে যেসব বিরল খনিজের মজুত রয়েছে সেগুলো প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোকে অনির্দিষ্টকাল ধরে টিকিয়ে রাখতে যথেষ্ট নয়।

বিশ্বের বেশিরভাগ বিরল খনিজ খনন এবং পরিশোধন করে এই সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে বেইজিং। এমনটাই মনে করেন ব্রিটেন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লিপম্যান ওয়ালটন অ্যান্ড কোং-এর ব্যবসায়ী অ্যারন জেরোম। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে তারা ওয়াশিংটনকে তাদের অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১৫, ২০২৫)