‘আনন্দ’ ঈশ্বরের স্বরূপ, মঙ্গলের চেয়ে বেশি হিন্দুয়ানী!

শিতাংশু গুহ
মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার হচ্ছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ ১৯৮৯ সাল থেকে বর্ষবরণ শুরু করে। তখন স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। দেশ থেকে স্বৈরাচার নামক অমঙ্গল দূর করে মঙ্গল কামনায় তখন এ শোভাযাত্রার নাম রাখা হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ (১৯৯০)। ২০১৬ সালে এটি ইউনিস্কো বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে এক শ্রেণীর ভদ্দরলোক বা কিছু মানুষের আপত্তি আছে। মৌলবাদী ইউনুস পন্থীরা এর বিপক্ষে। হেফাজত ও অন্য ইসলামী গোষ্ঠীগুলো তো বলেই দিয়েছে, ‘মঙ্গল হিন্দুদের ধর্মাচার’। যারা সবার অমঙ্গল চায়, যারা দেশ ও দশের কোন মঙ্গল কখনো করেনি, মঙ্গলে তাদের আপত্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। ইউনূসপন্থী ‘জুতা চোর’-দের অবশ্য মঙ্গল-অমঙ্গল কি?
এবার ঢাকায় ‘ইসলামী পহেলা বৈশাখ’ হবে, সবকিছুর মধ্যে ইসলাম না ঢুকালে এদের চলে না? মঙ্গল অবশ্যই হিন্দুর, শনি-রবি, বা সাতটি বারই তো হিন্দুর? পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সবই তো হিন্দুয়ানী। সূর্যদেবও হিন্দুদের। পারলে ঐগুলো বাদ দেন না কেন? সংস্কৃতিতে ভাল ভাল জিনিষ ঢুকলে সেটি সমবৃদ্ধ হয়, তা কোথা থেকে এসেছে তা দেখার দরকার পড়েনা।
ঈদের আগে ‘চাঁদনী রাত’ আগে ছিলো না, এখন ঢুকেছে, ভালোই তো। মুসলিম বিয়েতে আগে ‘গাঁয়ে হলুদ’ ছিলো না, এখন হচ্ছে, ক্ষতি কি? এগুলো ধর্ম না, লোকাচার, যা অনুষ্ঠানকে আনন্দময় করে তুলে। তেমনি মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই? তেমনি পান্তা ইলিশ নিয়ে কত কথা? অরে ভাই, এটি পছন্দ না হলে আপনি লুচি-হালুয়া খান।
বাঙ্গালী মুসলমান ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালন করছে বেশিদিন নয়, আমাদের ছোটবেলায় আমরা দেখেছি হিন্দুদের এটি পালন করতে। চৈত্র সংক্রান্তি’র বিষয়টিও তাই। বছরের প্রথম দিনে একটু ভালমন্দ খাওয়া, আনন্দ-ফূর্তি-গান বাজনা। ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ছিলো না, যদিও অনেকে মন্দিরে পূঁজা দেন্। বিকালে ‘হালখাতা’, মিষ্টি বিতরণ, যা মূলত: ব্যবসায়ী মহলে সীমাবদ্ধ ছিলো।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ‘পহেলা বৈশাখ’ এখন নুতন ভাবে সাঁজছে, এতে সমস্যা কোথায়? এরমধ্যে ধর্ম টেনে আনার যৌক্তিকতা নেই। হুজুররা ফতোয়া দেয়ার কে? সরকার ছুটি দিয়ে রেখেছেন, ব্যস। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিনটি বিভিন্নভাবে পালন করলে কারো কোন কথা থাকার কথা নয়, আপনি বাধা দেয়ার কে? মঙ্গল বাদ দিয়ে ‘আনন্দ’ নিলেন, এটি টিকবে তো?
ক’দিন বাদে হয়তো ‘আনন্দ’ নিয়েও হৈচৈ হবে, কেউ কেউ এটি হিন্দুয়ানী বলে আখ্যা দিতেও পারেন! হিন্দুরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জগতে ‘সচ্চিদানন্দ’ (সৎ-চিৎ-আনন্দ) প্রতিষ্ঠার কথা বলে। আনন্দ হলো ঈশ্বরের স্বরূপ। সচ্চিদানন্দ হলো ঈশ্বর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান। আরো ব্যাপক অর্থ আছে, সেদিকে গেলাম না। আবার যেমন বিবেকানন্দ, স্বরূপানন্দ অর্থাৎ সন্যাসীদের নামের শেষে ‘আনন্দ’ থাকে বটে।
এখন থেকে মঙ্গলবার কি আনন্দবার হয়ে যাবে? অথবা মঙ্গলগ্রহ আনন্দগ্রহ? কেজানে, ড: ইউনূসের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা, তার ভোদাই সমর্থক টোকাইরা বলতে শুরু করেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার কথায় পুরো বিশ্বের ট্যারিফ তিন মাসের জন্যে স্থগিত করে দিয়েছেন? তিনি নিজেই বলেছেন, মোদী তাঁর ভাই! চীনের প্রেসিডেন্ট হয়তো তার দুলাভাই! এত ক্ষমতা বাপরে বাপ! জাতি অপেক্ষায় আছে তাঁর পলায়নের দৃশ্যটি দেখার জন্যে।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।