স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশসহ অধিকাংশ দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ৯০ দিনের স্থগিতাদেশকে কাজে লাগাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেন, ৯০ দিন পর কী হবে তা ঝাপসা এবং এই বিরতি কোনো সমাধান নয়। তাই সরকারকে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের দিকে যেতে হবে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত ‘ইউএস ট্যারিফ অন বাংলাদেশেজ এক্সপোর্ট: রিসিপ্রোক্যাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, সরকারের উচিত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ৯০ দিনের বিরতিকে কাজে লাগানো। আমরা যদি সুযোগটা কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে ৯০ দিন পর আবার সতর্কতা জারি করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রত্যাশা, তাদের অগ্রাধিকার এবং বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ও শুল্কের বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে। সরকারকে মার্কিন সরকারকে প্রস্তাব দিতে চাইলে অফারগুলো সেট করতে হবে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তুলা আমদানির ক্ষেত্রে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মতো আমাদের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের নিজস্ব তুলার ওপর নির্ভর করে।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও চীনে উচ্চপণ্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে হবে বলে বাংলাদেশকে কিছু কৌশলগত প্রস্তাব দিতে হবে। সমন্বয় প্রক্রিয়া ও সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই ভূ-অর্থনীতির বিষয়গুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে মার্কিন শুল্ক আরোপের প্রভাব সংক্ষেপে সংজ্ঞায়িত করা, মার্কিন প্রশাসনের ওপর পুরোপুরি আস্থা না রেখে বাজারভিত্তিক ও কনটেন্টভিত্তিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও তুলা আমদানি করতে চায় তবে বন্দরগুলোতে যথাযথ অবকাঠামো এবং মার্কিন তুলার জন্য একটি মুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মুহিবুজ্জামান বলেন, নতুন শুল্ক দেশের প্রধান শিল্প ও এর ভ্যালু চেইনে আঘাত হানবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকার আলোচনার সময় পেয়েছে এবং সরকারের উচিত কৌশলগতভাবে তা করা।

তিনি আরও বলেন, ওষুধ শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে এলডিসি উত্তরণ এবং এটি এই খাতে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জেনেরিক না থাকায় বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা নতুন পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার তিনটি বিষয়েই কাজ করছে; ট্যারিফ ইস্যু, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং ভারতের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট।

তবে ব্যবসায়ীদেরও উচিত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে সরকারকে সহায়তা করা বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেল এবং নীতিগত উভয় ফ্রন্টেই কাজ করা উচিত।

বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারকে এনবিআর, গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। মার্কিন শুল্কের বিষয়ে তিনি সরকারকে কূটনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত এবং বাংলাদেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা কী তা অবশ্যই চিহ্নিত করা উচিত।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও ভারত শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করতে পারে, তাই বাংলাদেশেরও উচিত যৌক্তিক বাণিজ্য ও আলোচনার দিকে মনোনিবেশ করা।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকিসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০২৫)