শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর : চাটমোহর পৌর শহরের অদূরেই একটি গ্রামের নাম বোঁথড়। এই গ্রামেই প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও তিন দিনব্যাপী মেলা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই মেলায় মানুষের ঢল নামে। শুধু তাই নয়, হাজার বছরের প্রাচীন এই চড়[ক পূজায় দেশ বিদেশে থেকে পূণ্যার্থীরা আসেন। চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন।

পাটে ধুপ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে উপমহাদেশের মধ্যে বিখ্যাত এই চড়ক পূজার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

রবিবার (১৩ এগ্রিল) মন্দিরে পাশের পুকুর থেকে উত্তোলন করা হবে চড়ক গাছ। এরপর মন্দিরে মহাদেবের মূর্তি স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পূজা শুরু হবে। চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। এদিকে পূজা ও মেলা উপলক্ষে এখন প্রতিটি হিন্দু বাড়িতেই এখন অতিথি আপ্যায়ন চলছে। তবে, কবে থেকে এই পূজা ও মেলা শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস এখনও পাওয়া যায়নি। অনেকের ধারণা সিন্ধু সভ্যতা থেকেই এই পূজা বা মেলার প্রচলন। আবার অনেকে বলছেন, এই পূজার প্রচলন হয় বান রাজার আমল থেকে।

জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চড়ক মেলা চলছে হাজার বছর ধরে। একটি চড়ক গাছকে কেন্দ্র করে চৈত্রের শেষ সপ্তাহে এই মেলা বসে ও পূজা শুরু হয়। একসময় পুরো বৈশাখ মাস জুড়ে চলতো মেলা। বোঁথরে এমন এক সময় ছিল, যখন মেলার দেড়-দু’মাস আগেই বোঁথর গ্রামটিতে পড়ে যেত সাজ সাজ রব। বহু দুর-দুরান্ত থেকে দোকানীরা এসে তাদের পসরা সাজিয়ে বসতো। যাত্রা, সার্কাস, নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শন, ঘোড়াদোলা ও পুতুল নাচে এক উৎসব আমেজে ভরে উঠতো গোটা চাটমোহ অঞ্চল। মেলার সেই জৌলুস আজ আর নেই, নেই জাঁকজমককতা। তবে, আছে চড়ক গাছ, পাঠ ঠাকুর, বিগ্রহ মন্দির। তাই বছর শেষের এ মাসটিতে এখনো মেলা বসে, চলে তিনদিন ব্যাপি। জনশ্রুতি আছে, বান রাজার আমল থেকে এই পূজা ও মেলার প্রচলন শুরু হয়।

এখনো বোঁথড় মেলার ঐতিহ্যবাহী আনুষ্ঠানিকতা ঠিকঠাকই আছে। শুধু কমেছে মেলার জৌলুস। এই মেলাকে কেন্দ্র করে একদা সর্ব ধর্মের সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে যে সম্প্রীতি লক্ষনীয় ছিল, এখন তা আর নেই। বাঙ্গালী লোকসংস্কৃতির এই বৃহৎ উৎসবটি এখন মহাকালের সাক্ষী হয়ে কোনোমতে টিকে আছে মাত্র।

চাটমোহর পৌর শহরের বাসিন্দা রনি রায় জানান, দেশ-বিদেশের অনেক ভক্ত এই মেলায় আসেন। মনের বাসনা পূরণার্থে অনেক ভক্ত মানত করে থাকেন। কেউ পাঁঠাবলী দেন, কবুতর উৎসর্গ করেন, আবার কেউ বা পূজার অর্ঘ্য সাজানো ভরণ চালুন দেন। চালুন মাথায় দিয়ে মন্দিরের চার পাশ দিয়ে সাতপাক ঘুরে সাজানো চালুন মন্দিরে দিয়ে দেন। মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন আসেন। মেলার কদিন বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

বোঁথড় মহাদেব মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, হাজার বছর ধরে চলে আসছে এতিহ্যবাহী চড়ক পূজা। দেশ-বিদেশের অনেক পূর্ণার্থী এই পূজায় অংশ নিয়ে থাকেন। পূজা উপলক্ষে আমাদের এলাকায় উৎসবের আমেজ চলছে। বরাবরের মতো এবারও তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

(এসআই/এসপি/এপ্রিল ১২, ২০২৫)