শিতাংশু গুহ


মিডিয়া হেডলাইন করেছে, ‘দিনাজপুরের বনতারা গ্রামে ৭দিন আতঙ্কের পর এলো সম্প্রীতির বার্তা’। এটি ৯ই এপ্রিলের সংবাদ। এই গ্রামটি ৭দিন অবরুদ্ধ ছিলো। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে দোকানপাট খুলতে দেয়া হয়নি। পুরুষরা পলাতক ছিলো। হিন্দুরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলো কখন আক্রমন হয়? সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছিলো যাতে হিন্দুরা পালতে না পারে। ৭দিন পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘হিন্দুরা ভয় পাবেন না, দোকানপাট খুলতে পারেন। 

বিডিনিউজে২৪ হেডিং করেছে, ‘মহানবীকে কটূক্তি, উত্তেজনার মধ্যে বাড়ীছাড়া তরুনের পরিবার’ (৭ই এপ্রিল ২০২৫)। তরুনের নাম সবুজ দাস, তিনি ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে কাজ করেন। ১ লা এপ্রিল তাঁর ফেইসবুকে ওই পোষ্ট করা হয়। পোষ্টটি শেয়ার করার জন্যে পুলিশ বনতারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উপেন্দ্র চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে। জানা যায়, সবুজ দাসের যে আইডি দিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে, সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্মর্তব্য যে, রামু’র উত্তম বড়ুয়াকে কিন্তু ১৩ বছর পরও খুঁজে পায়নি পুলিশ। একই মিডিয়া ৯ই এপ্রিল আর একটি সংবাদ হেডিং করেছে যে, ‘হিন্দু যুবকের মোবাইল থানায় জমা দেয়া আছে, তবু হচ্ছে ইসলাম বিরোধী পোষ্ট।

ইমাম হোসেন নামে এক ভদ্রলোক ফেইসবুকে লিখেছেন: “দিনাজপুরে মানুষের জীবন বিপন্ন। ওঁরা হিন্দু বলে বাহাদুরি দেখাচ্ছে ইসলামী সন্ত্রাসীরা। সরকার কি চাচ্ছে ৭১-র মত হিন্দু হলোকাষ্ট ঘটাতে? ইসলামী সন্ত্রাসীরা পুরো গ্রাম ঘিরে রেখেছে, খাদ্য নেই, ওষুধ নেই, উপার্জন নেই। এঁরা ফিলিস্তিন নিয়ে মেতে আছে, অথচ দেশের মানুষকে শুধুমাত্র বিধর্মী হওয়ায় নির্যাতন করছে। তসলিমা নাসরিন লিখেছে, “ইউনুস বাহিনী’ গাজা নিয়ে মেতে আছে, ভিনদেশি মানুষের জন্যে মাতম করছে, নিরীহ-নিরাপরাধ স্বদেশীকে হত্যা করছে”। হিন্দুরা বলছে, ধর্ম অবমাননার মহান হাতিয়ার ব্যবহার করে হিন্দু তাড়ানোর কৌশল আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ। তাদের মতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়।

সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, গাজার পাশাপাশি একটু টাঙ্গাইলের দিকে তাকান, তাঁর ভাষ্যমতে ৬ই এপ্রিল ২০২৫ ধর্ম অবমাননার গুজব রটিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেলদুয়ারি দক্ষিণ বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অখিল কর্মকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে একদল পশু। তিনি একটি ভিডিও দিয়েছেন: https://www.facebook.com/share/v/165Z4i8U4m/?mibextid=wwXIfr

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাঁকে উদ্ধার করে। তারমতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দুর ওপর আক্রমন একটি সহজ পন্থা হয়ে গেছে। না, বাংলাদেশে কোন সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়না, একদমই না!

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোথাও নেই (একাত্তর টিভি ৫ই এপ্রিল ২০২৫)। সমকাল বলেছে, বরিশালে রাম নবমী উপলক্ষ্যে ‘রামায়ণ’ নাটক মঞ্চস্থ করতে দেয়নি প্রশাসন। এটাই বাংলাদেশের চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।