‘উদীয়মান পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প’
.jpg)
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন মার্কিন শুল্কহারের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে সম্ভাব্য প্রভাব এড়াতে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজার সন্ধানে উদীয়মান পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো প্রতি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘রপ্তানি বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব’ সংক্রান্ত এক আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
ঢাকার বনানীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ সভা পরিচালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং–সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও গবেষণা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন– র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক।
গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায্য শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা অপ্রয়োজনীয় আমদানি দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বাণিজ্যে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প বাজার সন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে উদীয়মান পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বাংলাদেশের পণ্যের ভালো বিকল্প বাজার হতে পারে। এজন্য রপ্তানি পণ্যের তালিকায় বৈচিত্র্য আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যের বিষয়টিকে এখন অস্ত্রে রূপান্তর করেছেন। এটিকে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এ ধরনের শুল্কারোপ অন্যায্য ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওর নীতি ভঙ্গ করে করেছে। এতে কেউই লাভবান হবে না। এ পদক্ষেপ থেকে কোনো সুফল পাবে না, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটা অস্থিরতা দেখা দেবে। শেষ পর্যন্ত এ শুল্ক কাঠামো টেকসই নাও হতে পারে।’
পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘নতুন মার্কিন শুল্ক ব্যবস্থা নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর একটি সম্মুখ আক্রমণ। যদি এটা দীর্ঘ হয় তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দেবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে কেবল তার রপ্তানি খাতগুলি রক্ষা করার জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি স্থিতিশীল এবং যুক্তিসঙ্গত বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে নিজেকে স্থাপন করার জন্য দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। করহার যৌক্তিকীকরণসহ বাংলাদেশকে সংস্কার, নীতি সহজীকরণ, দুর্নীতি দমন এবং অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়ার মতো প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলচনা শুরু করেছে। নীতিনির্ধারকদের সক্রিয় প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। জোর দিতে হবে বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনার ওপর।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করেছে এবং উন্নয়ন সহায়তাও কমিয়েছে। শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, যা সামনের দিনগুলিতে আরও জটিল হবে।’
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এই সময়ে কোনো অন্যায্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মেনে নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, অন্যায্য ও অসম আলোচনা প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে চিন্তা না করে বরং বাংলাদেশের আমদানি ব্যবস্থার সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও মঙ্গোলিয়াসহ উদীয়মান পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন।
(ওএস/এএস/এপ্রিল ০৯, ২০২৫)