রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অনলাইন পোর্টাল সমাজের আলো ডট.কম এর সম্পাদক ও জেলা কৃষকলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইয়ারব হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাকে তার সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।তিনি তুজুলপুর গ্রামের মৃত ইসহাক মোড়লের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলার আসামী ইয়ারব হোসেন গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার সকালে এখবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে গোবিন্দকাটি কলারোয়া, তুজুলপুর, হাচিমপুরসহ কয়েক গ্রামের জামাত ও বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন তার বাড়িতে অবস্থান নেয়। বেগদিক বুঝে ইয়ারব বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলে খবর দিলে দুপুর দুটোর দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করা ইয়ারব হোসেন ১৯৯৫ সালে ঝাউডাঙা বাজারের একটি হোটেলে মেচিয়ার হিসেব কাজ করতো। তার কিছুদিন পর সে সবজরি ব্যবসা করতো। সাতক্ষীরার এক সাংবাদিকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার একপর্যায়ে খুলনার একটি পত্রিকার সাংবাদিক বনে যান। সেখান থেকে তিনি সাতক্ষীরা ও কলারোয়ার দীর্ঘ সীমান্তের চোরাঘাট মাািলকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়ারব হোসেন তিন বার এসএসসি পরীক্ষ দিয়েছেন। ঝাউডাঙা বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ইয়ারবের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল। ২০১৫ সালে ঝাউডাঙার পাথরঘাটায় এক ব্যক্তির বাড়িতে পুলিশ নিয়ে মাদক উদ্ধারের নামে লুটপাট চালানোর অভিযোগে মামলা হলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

২০১৬ সালের ১৫ আগষ্ট তুজুলপুর কৃষিক্লাবে তৎকালিন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও তদন্ত ওসি মহিদুল ইসলামের সঙ্গে একসঙ্গে ভুরিভোজ করার ছবি তার ফেইসবুকে স্টাটাস দেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামী ইয়ারব হোসেন। ওই ছবি নিয়ে দৈনিক প্রজন্মের ভারবনায় নিউজ করায় সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ’র বিরুদ্ধে তুজুলপুরগ্রামের ট্রলীচালক দেবহাটার কামরুল হত্যা মামলার আসামী আজাহারুল ইসলামকে দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও ইয়ারব চাঁদাবাজির মামলা দেন। চার্জশীটে নিজে সাক্ষী হন ইয়ারব। ইয়ারব হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলা ভিশনের আসাদুজ্জামান, ও সাবেক সাংসদ ফজলুর রহমান পৃথক দুটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। পছন্দের লোক না হওয়ায় ইয়ারব তার গ্রামের আনিসুর রহমান, রানা মেম্বর, রফিকুল ইসলাম, সাঈদুল ইসলামসহ কমপক্ষে একডজন ব্যক্তির নামে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করান। বিএনপি নেতা মোঃ জামাল নাসের ডিউককে তার কারখানায় কয়েকভার মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিনি কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হন। গোবিন্দকাটি গ্রামের শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজনের কাছ থেকে আওয়ামী সরকারের সময়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ইয়ারবের বিরুদ্ধে। তুজুলপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ও তার স্ত্রীকে ক্লাবে আটকে রেখে তার মেয়ের পাচার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সিল ও সহি নকল করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কাগজ করে নেন ইয়ারব। সাতক্ষীরার কৃষি কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে পাওয়ার টিলার নেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সুদের ব্যবসা, ঝাউডাঙা বাজার কমিটির কাছ থেকে টাকা না দিয়ে ১০ থেকে ১৫টি শেয়ার নিয়ে নিজের পকেট ভরাতেন ইয়ারব। স্থানীয় কৃষকদের খাদ্যগুদামে ধান না নিয়ে নিজে সংগ্রহ করে তা খাদ্য গুদামে দিয়ে প্রতিবছন বহু টাকা উপার্জন করে থাকেন ইয়ারব।

কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপে রেখে বা সুসম্পর্ক রেখে তাদেরকে ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে ইয়ারবের বিরুদ্ধে। নিবন্ধন ছাড়া নিজের ফেইসবুকের পেইজ খুলে সমাজের আলো ডট কম অনলাইন পোর্টাল খুলে সম্মানী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে ইয়ারবের বিরুদ্ধে। সাবেক সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি এর সঙ্গে সখ্যতা রেখে ইয়ারব বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড, আব্দুল লতিফের সঙ্গে সখ্যতা রেখে বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাক্ষী দিয়ে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবরে নামে আপত্তিকর ভাসা ব্যবহার করে হিরো বনে যান।

৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পিঠের চামড়া বাঁচাতে কয়েকবার কলকাতা- যশোর করেছেন ইয়ারব। এ সময় তিনি তার মাইক্রোবাসটি বাবা থেকে কৌশলে সাতক্ষীরায় ও পরে ঢাকায় নিয়ে তুহিনের কাছে দিয়ে মালিকানা হারান। একপর্যায়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের এক সাংবাদিক নেতার সঙ্গে সখ্যতা রেখে নিজের নামে ২০১৩ সালে ঝাউডাঙা বাজারে ভ্যানচালক হাফিজুর হত্যা মামলা, পাথরঘাটার চাঁদাবাজি মামলা, শ্রীউলার শাহীনুরের চাঁদাবাজি মামলা থাকার পরও কয়েকদিন ধরে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ইয়ারব।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শামিনুল হক জানান, ইয়ারবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার নামে হত্যা ও চাাঁদাবাজি মামলা থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে তা জানাতে পারবেন।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০২৫)