শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে পেকিন জাতের হাঁস পালন করে সফলতা অর্জন করেছেন ২৫ জন নারী। এ হাঁস পালনে নেই কোন বাড়তি ঝামেলা। রোগ-বালাইও কম। এ হাঁসের মাংস অধিক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের সহযোগিতায় দিনাজপুরের কয়েকটি এলাকায় ২৫ জন গৃহিণীকে হাঁস পালনের এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করেছে মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে নামে একটি বেসকারি সংস্থা। 

হাঁসের ডাকে ঘুম ভাংছে দিনাজপুরের সদর আস্করপুর ও বিরল উপজালার বিশ্বনাথপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে মানুষের। এসব গ্রামে এখন 'মাংসের জন্য বয়লার টাইপ পেকিন জাতের হাঁস পালন' এ হিড়িক পড়েছে।

ওই এলাকার লাবন্য, প্রতিমা, বুলবুলি, মর্জিনা, সোহেলী, অর্পিতা, মুয়ুরী, শর্মিলা, সালেহা, আর্জিনাসহ বেশ কয়েকজন নারী পেকিন হাঁস পালন করে সফলতা অর্জন করেছেন। বিশ্বের জনপ্রিয় ব্রয়লার টাইপ আমেরিকান জাতের পেকিন হাঁস ৬০ থেকে ৬২ দিনের মধ্যে আড়াই/তিন কেজি
পরিমাণ ওজন হচ্ছে।

হাঁস পালনকারি গৃহিণী প্রতিমা রানী জানান, এই হাঁস পালনে নেই কোন বাড়তি ঝামেলা। সংসারের কাজের ফাঁকে অবসর সময়গুলো এই হাঁস পালনে কাজে লাগানো হয়। এই হাঁস পালনে রোগ-বালাইও কম। এ হাঁসের মাংস অধিক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন। তাই বাসাবাড়ি থেকে হাঁস ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

সরজমিনে দেখা গেছে, ছোট ঘর তৈরি করে তার চত্বর দিকে নেটের ঘেরা দেওয়া হয়েছে। ছোট্র ছোট্র দু'এক গর্তও করা হয়েছে। যাতে পানি রয়েছে। রয়েছে পাত্রে খাদ্য। সেখানেই লালন-পালন হচ্ছে হাঁস।

হাঁস পালের উদ্যোক্তা লাবন্য জানায়, ‘তার সমিতির মাধ্যমে ১৬ জন নারী পেকিন হাঁস পালন করে সফলতা অর্জন করেছে। হাঁস পালনে মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র হতদরিদ্র ক্ষুদ্র খামারি সদস্যকে পঞ্চাশটি করে পেকিন হাঁস প্রদানসহ স্বল্প খরচে চিকিৎসাকালীন ওষুধ ও বিনামূল্যে ৫০ কেজি করে পোল্ট্রিফিড প্রদান করেছে। এতে করে দরিদ্র খামারি হাঁস পালনে সফলতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিনামূল্যে হাঁসের বাচ্চা ও খাদ্য পেয়ে খুশি সুবিধাভোগী পরিবারগুলো। আর এই সাফল্য দেখে অনেকে অগ্রহী হয়ে উঠেছেন, এই পেকিন জাতের হাঁস পালনে।'

পেকিন হাঁস পালনে সফলতার গল্পে বুলবুলি রায় বলেন, ‘বিশ্বের জনপ্রিয় ব্রয়লার টাইপ আমেরিকান জাতের পেকিন হাঁস ৬০ থেকে ৬৫ দিনে মধ্যে আড়াই থেকে তিন কেজি পরিমাণ ওজন হয়। এ হাঁসের মাংস অধিক সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন। রোগ কম হওয়ায় বাচ্চা পালনে মৃত্যুর হার কম। পেকিন হাঁস পালনের জন্য ছোট আকারে খামার তৈরিতে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা হয়। তাদের এ সফলতা ধরে রাখতে লাভ্যাংশসহ হাঁস পালনে খামার বড় করার চেষ্টা করছে অনেকেই।'

প্রথম বারের মতো নতুন প্রজাতির পেকিন হাঁস পালন করে সাফল্য পেতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম। এরই মধ্যে তাঁর খামার থেকে ৮ টি হাঁস বিক্রি হয়েছে।

গৃহিণী নাসিমা বেগম জানায়, 'আমি শ্বশুরবাড়িতে এসে এ হাঁস পালন দেখলাম। এই সমিতির একজন সদস্য হিসেবে আমিওএই হাঁস পালনে আগ্রহী। আমিও এ রকম একটি সুযোগ খুঁজছিলাম।'

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের সহায়তায় দিনাজপুরের কয়েকটি এলাকায় ২৫ জন গৃহিণীকে হাঁস পালনের এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করেছে মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে নামে একটি বেসকারি সংস্থা।

এমবিএসকের প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.রাশেদুল আলম বলেন, 'মাংসের জন্য ব্রয়লার টাইপ পেকিন জাতের হাঁস পালনে রোগ কম হওয়ায় বাচ্চা পালনে মৃত্যুর হার কম। এতে দরিদ্র খামারি হাঁস পালনে সফলতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিনামূল্যে হাঁসের বাচ্চা ও খাদ্য পেয়ে খুশি সুবিধাভোগী পরিবারগুলো। সদস্যগণের দলীয়ভাবে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। হাঁসপালনে সহায়ক পদ্ধতি ও প্রাথমিক চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয় পরামর্শ দেই আমরা। আমরা চাই দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থিকভাবে মুক্তি লাভ করুক।'

পেকিন হাঁস পালনের জন্য ছোট আকারে খামার তৈরিতে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা হয় বলে তিনি জানান। তাদের এ সফলতা ধরে রাখতে লাভ্যাংশসহ হাঁস পালনে খামার বড় করার চেষ্টা করছে অনেকেই।

(এসএস/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০২৫)