জমি নিয়ে বিরোধ
দেবহাটায় মন্দিরের রেলিং ও প্রাচীর রাতের আঁধারে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো প্রতিপক্ষরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরাা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দিরের চারিধারের বাঁশের চটার রেলিং ও পাকা প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় মন্দিরের মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধ কেটে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটপাট করা হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনজন নারীসহ ছয়জন জখম হয়েছেন। গত বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে।
পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ কুমার রায় জানান, ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদার কৃষ্ণকিশোর বন্দোপাধ্যায় সিএস ৩২ খতিয়ানের ২৭৮৫ দাগের এক একর হমিতে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। একতলা বিশিষ্ঠ মন্দিরের বারান্দার চারিধারে বাঁশের চটার রেলিং রয়েছে। মন্দিরের পূর্ব পাশে পাকা প্রাচীর দেওয়া ছিলো। মন্দিরের জায়গাটুকু বাদ দিয়ে বাকী জমিতে ক’টি মাছের ঘের রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ওই মন্দিরে পুজা অর্চনা ছাড়াও ঘেরে গলদা, বাগদা, রুই , কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছিলেন।
অনিমেষ কুমার রায় আরো জানান, সম্প্রতি মন্দিরের ৯৯ শতক জমির মধ্যে ৮৫ শতক জমি মাটিকুমড়া গ্রামের কলিমউদ্দিনের ছেলে আজিবর রহমান ও মুজিবকর রহমানের কাছ থেকে পাইকাড়া গ্রামের বাবুরালী গাজীর ছেলে মাহামুদুল হাসান, জামাল ফারুক ও জামাল ফারুকের স্ত্রী রওশানারা খাতুন কিনেছেন দাবি করে মন্দির কর্তৃপক্ষকে জমি ছেড়ে দিতে বলে। অথবা ওই জমি মন্দির কর্তৃপক্ষকে ২০ বছরের জন্য লীজ নিতে বলে। প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ওই জমি দখলে নেওয়ার হুমকি দেয় বাবুরালী গাজী ও তার ছেলেরা। বাধ্য হয়ে তার (অনিমেষ) জ্যাঠাত ভাই তপন রায় বাদি হয়ে গত ৬ মার্চ সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৩৩৩/২৫ নং মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাবুরারী গাজীসহ তার ছেলে মাহামুদুল হাসান, জামাল ফারুক ও জামাল ফারুকের স্ত্রী রওশানারাসহ কয়েকজনকে বিবাদী করা হয়। আদালত আগামি ১৯ মে এর মধ্যে জমির দখল সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার দেবহাটা উপজেলা সহকারি ভূমি কর্মকর্তাকে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরদিন পুলিশ উভয়পক্ষকে নোটিশ জারি করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেন। নোটিশ পাওয়ার পর প্রতিপক্ষরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মামলার বাদিকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে জনাব আলী গাজীর ছেলে বাবুরালী গাজীর নেতৃত্বে তার ছেলে জামাল ফারুক, মাহামুদুল হাসান, নজরুল ইসলাম, মোঃ ত্বোহা, ঢেবুখালি গ্রামের রজব আলী হাওলাদারের ছেলে মজিদ হাওলাদার, কালিগঞ্জ উপজেলার সন্ন্যাসীর চক গ্রামের রজব আলী হাওলাদারের চেলে মহিদ হাওলাদার, অম্বর ঢালীর ছেলে আনারুল ঢালী, জনাব আলী গাজীর ছেলে সাহাবুদ্দিন গাজী, তার ছেলে আলাউদ্দিন গাজীসহ অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী হাতে দা, লাঠি, শাবল, লোহার রড, বাঁশের লাঠি নিয়ে মন্দির চত্বরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা মন্দিরের চারিপাশের বাঁশের বেড়া ও পূর্ব পাশের ইটের প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। পরে তারা বেড় জাল দিয়ে গলদা ও বাগদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটপাট করে। ভাংচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় কাকিমা ফুলমতি রায়, বোন অনিমা রায়, ভাইপো অজয় রায়সহ ছয়জন জখম হয়। মন্দিরের দেখভালকারি ফুলমতি রায়কে মন্দির থেকে তুলে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ করলে বা আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করলে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে আহতরা কালাবাড়িয়া গ্রামের ভবতোষ বৈদ্যর কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
মন্দির কমিটির সভাপতি বিধান রায়, তার স্ত্রী অনিমা রায়, পাইকপাড়া গ্রামের তাপস রায়ের ছেলে অমল রায়, প্রভাষ রায় এর স্ত্রী ফুলমতি রায়, সন্ন্যাসীর চক গ্রামের মান্দার গাজীর ছেলে মোবারক গাজীসহ কয়েকজন জানান, বুধবার গভীর রাতে যেভাবে মন্দিরের রেলিং ও পাকা প্রাচীর ভাঙা হলো তা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া যেভাবে মাছ লুটপাট করা হলো তা মেনে নেওয়া যায় না। বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টার দিকে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হযরত আলীর উভয়পক্ষকে মন্দিরের মাঠে হাজির করালে প্রতিপক্ষরা তাদের দোষ স্বীকার করেছে। মন্দিরের উপর হামলা মানে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের উপর হামলা। এ ঘটনার প্রতিকার না হলে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাইকাড়া গ্রামের জনাব আলীর ছেলে বাবুরালী গাজী বলেন, জমি কিনেছেন তাই দখল করতে গেছেন। দখলে বাধা দেওয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হযরত আলী জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। এ ঘটনায় তপন রায় বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছন। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
(আরকে/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)