ঈদের ছুটি শুরুর আগেই লঞ্চের ৯৫ শতাংশ টিকিট শেষ
আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে প্রতিদিন মোট ১৪টি লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করতো। সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে মাত্র চারটি লঞ্চ দুই প্রান্ত থেকে যাত্রী পরিবহন করেছে। তারপরেও যাত্রী সংকট ছিল ব্যাপক। তবে আসন্ন ঈদ-উল ফিতরকে ঘিরে ভিন্নরুপ চিত্র ফিরে এসেছে বরিশাল নদী বন্দরে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শুরুর আগেই প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফিরতি টিকেটেরও চাহিদা বাড়ছে। তাই এবারের ঈদকে ঘিরে লাভের মুখ দেখাবে লঞ্চ মালিকদের। সরেজমিনে বরিশাল নদী বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচটি লঞ্চ নোঙর করা। প্রতিটি লঞ্চেই ধোয়া-মোছা আর সাজসজ্জার কাজ শেষ করা হয়েছে। ছুটিতে থাকা স্টাফদের তাগিদ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। স্পেশাল সার্ভিসের মধ্যদিয়ে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যুক্ত হচ্ছে এক হাজার যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বিলাসবহুল নতুন লঞ্চ এমভি এম.খান-৭।
বরিশালে নবনির্মিত বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযান এমভি এম খান-৭ লঞ্চ কোম্পানির মালিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম খানের চেয়ারম্যান মাহফুজ খানের দাবি, তিনি এমনভাবে লঞ্চটি তৈরি করিয়েছেন, যাতে যাত্রীরা কোনও কাজ না থাকলেও লঞ্চটি দেখতে আসতে বাধ্য হবেন। দেশের অন্যতম চারতলা বিলাসবহুল বৃহত্তম এ নৌযানটি দেশীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতায় বরিশালেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সোয়া তিনশ’ ফুট দৈর্ঘ্যের বিলাস বহুল নৌযানটিতে যাত্রীদের জন্য সবধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ বিলাসবহুল ভ্রমণের নিশ্চয়তা রয়েছে।
এ রুটের বিলাস বহুল এমভি মানামী লঞ্চের স্টাফরা জানিয়েছেন, কয়েকদিনের চেষ্টায় পুরো লঞ্চটি তারা নতুন রূপ দিয়েছেন। বিভিন্নস্থানে রঙ করার পাশাপাশি কেবিনগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে তারা এই প্রস্তুতি নিয়েছেন। মনির হোসেন নামের এক স্টাফ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর সারাবছরই তাদের যাত্রী সংকট থাকে। ঈদে ও কোরবানিতে কিছু যাত্রী হয়।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, স্পেশাল সার্ভিসসহ বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে এবার মোট ১৯টি বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী সেবা দিবে। আরও ২-৩টি লঞ্চ ভায়া রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। সমস্ত লঞ্চে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে যাত্রীরা বলছেন, অপ্রস্ততার কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দূর্ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে যানজটের বিরম্বনা এড়াতে এবার পরিবার নিয়ে নিরাপদে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরার জন্য সড়ক পথ ছেড়ে অনেকেই নৌপথকে বেঁছে নিয়েছেন। একাধিক যাত্রীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে লঞ্চে যাতায়াত খুবই আরামদায়ক। ঈদের সময় সড়কে দেখা যায় পরিবহনগুলোর বেপরোয়া প্রতিযোগিতা। এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটে চলায় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। তাই ঈদ যাত্রায় ঝুঁকি এড়াতে তারা এবার লঞ্চযাত্রাকে বেঁছে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একাধিক লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ১৯টি লঞ্চে বিভিন্নমানের প্রায় পাঁচ হাজার কেবিনের পাশাপাশি প্রতিটি লঞ্চেই ডেকে হাজারের অধিক যাত্রী বহন করার ধারন ক্ষমতা রয়েছে। এমভি আওলাদ-১০ লঞ্চের ব্যবস্থাপক অভিজিৎ সরকার বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে ১২ মার্চ থেকেই আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কেবিনের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এমভি মানামী লঞ্চের ব্যবস্থাপক জিয়াউল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ইতোমধ্যে ঈদে আসা এবং ফিরতি ট্রিপের অগ্রিম কেবিনের প্রায় ৯৫ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, এ বছর যাত্রীর চাঁপ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। আমরা সবগুলো লঞ্চ প্রস্তুত রেখেছি।
বরিশাল সদর নৌ-থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহসিন বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নৌ বন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন শুরু করছেন। এছাড়া কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। আশা করছি নৌপথে এবারের ঈদ যাত্রা সুন্দর হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদে ঘরমুখী ও পরবর্তীতে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলগামী যাত্রীদের সর্বাধিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বরিশাল নদী বন্দরে কন্ট্রোল রুম ও হেল্প ডেস্ক ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। যাত্রী সেবায় থাকবে মেডিক্যাল টিম। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য বাহিনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
(টিবি/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)