রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা এলাকার এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। মামলায় জামিন পেয়ে শালিসি বৈঠক ডেকে মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় বাদিকে পিটিয়ে জখম করেছে আসামীরা। এ সময় বাদি একটি আপোষনামায় সাক্ষর না করায় তার স্বামীর কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের আশাশুনি শাখার একটি চেকে ৫০ হাজার টাকা বসিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ওই নারী  সাংবাদিক, আদালত ও প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

শ্রীউলা গ্রামের এক রং মিস্ত্রীর স্ত্রী জানান, ২০২২ সালের ১০ মার্চ ৮৮০ নং রেজিষ্ট্রি কোবালামূলে শ্রীউলা মৌজার আরএস ১৯২ দাগের ৪ দশমিক ২৫ শতক জমি তিনি তার বাবা ও দুই ফুফুর কাছ থেকে কেনেন। প্রায় একই সময়ে ছবেদ আলীর কাছ থেকে এক শতকের বেশি জমি কেনার জন্য বায়নাপত্র করেন। এরপর তিনি ওই জমির পূর্ণাঙ্গ দখল পাচ্ছিলেন না। একই গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে মোঃ রফিকুল গাজী ও নেটু গাজীর ছেলে লতিফ গাজী তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। এ ছাড়া রফিকুলের ছেলে একলাচ এর কাছ থেকে তিনি জমি কেনার জন্য এক লাখ টাকা দিলেও চুক্রিপত্রটি ছিঁড়ে ফেলে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ওই নারীকে হেঁকে দেয় একলাচ। জমি উদ্ধারের জন্য তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে লতিফ ও রফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রফিকুল ও লতিফ গত ২৬ জানুয়ারি তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। একপর্য়ায়ে ওই নারী গত পহেলা ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)(খ) ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় আব্দুল লতিফ ৫ দিন জেল হাজতে ছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আসামী লতিফ ও রফিকুল মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিতে থাকলে তিনি উপজেলা জামায়াত অফিসে অভিযোগ করেন। জামায়াতের উদ্যোগে শালিসি বৈঠক হলেও তিনি তিন শতকের বেশি জমি বুঝে পাননি। তবে শালিসী বৈঠক শেষে লতিফ ও রফিকুলসহ কয়েকজন তার কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়। এমনকি তার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপে রাখতে তার স্বামীর কাছ থেকে জনতা ব্যাংকের আশাশুনি শাখার একটি ৫০ হাজার টাকা চেকে সই করে নেওয়া হয়। মামলা তুলে নিয়ে ওই চেক ফেরৎ দেওয়ার কথা বলা হয়। একপর্যায়ে তার স্বামীকে হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়। মামলা তুলে না নেওয়ায় ওই নারীকে গত ৪ আগষ্ট পিটিয়ে জখম করা হয়।

এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ৮ আগষ্ট আশাশুনি থানায় জিআর -১৭৬/২৪ নং মামলা দায়ের করেন। মামলায় রফিকুল ও লতিফ গাজীসহ তাদের পরিবারের চার নারীকে আসামী করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক আপোষনামায় সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। ওই চার নারী আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও পরবর্তীতে কয়েকটি ধার্যদিন পর গত ১৯ মার্চ আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এমতাবস্থায় তিনি তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তার মেয়েকেও ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় তার স্কুল পরিবর্তণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আব্দুল লতিফ ও রফিকুল গাজী বলেন, সে যেখানে জমি কিনেছে সেখান থেকেই জমি নিতে হবে। ইচ্ছামত জমি দখল করায় বিরোধের সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে কারা বলেন, মিথ্যা মামলায় জেল খাটায় বচসার জেরে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। তবে পুলিশ ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে ওই নারীর পক্ষে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)