‘আমাকে হুজুরের ভালো লাগে, আমি ছিনতাইকারী নই, পূর্ব পরিচিত’

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে হামজা কাজী (২৪) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। কিন্তু ওই ছিনতাইকারীর দাবি যার টাকা নিয়ে সে দৌড় দিয়েছে, তিনি তার পূর্ব পরিচিত। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা একে অন্যের সাথে কথাবার্তা ও দেখা সাক্ষাৎ করে থাকেন।
ছিনতাইকারী ও ছিনতাইয়ের শিকার ভুক্তভোগী হিসেবে ঘটনাস্থলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনতার সামনে দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথায় গড়মিল খুঁজে পেলে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী মাওলানা গোলাম ছয়োয়ার (৫০)কেও পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা।
বুধবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে এমন ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল থেকে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ, দুই জনের কথাবার্তা ও ফোন কল যাচাই-বাছাইয়ের পর জানা যায় তারা উভয়ই পূর্ব পরিচিত। ফরিদপুরের মধুখালি শাহ হাবিব আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক গোলাম ছায়োয়ার (৫০) মাঝে মধ্যেই হামজার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতেন, তাঁকে বিভিন্ন সময়ে গিফট করতেন, টাকা পয়সা দিতেন।
বুধবার সারাদিন ওই শিক্ষক হামজাকে ফোন দেন এবং বিকেলে তিনি দেখা করতে কানাইপুরে আসেন, এক সাথে ইফতারও করেন তারা। পরবর্তীতে কানাইপুরের একটি শপিং কমপ্লেক্সে কোন এক ঘটনাক্রমে হামজা তার সঙ্গী মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম ছারোয়ারের পঁচিশ হাজার পাঁচশত টাকা নিয়ে দৌড় দিলে তিনি ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দেন। ওই সময় ঢাকায় পড়াশোনা করা কানাইপুরের স্থানীয় আলী আহমেদ আপন (১৬) নামের একটি ছেলে হামজাকে ধরে ফেলে। হামজা তখন তার হাতে থাকা একটি কাস্তে দিয়ে কোপ দেয় তাতে আপনের কপাল কেটে যায়। পরবর্তীতে জনতা হামজাকে ধরে ছিনতাইকৃত টাকাগুলো উদ্ধার করে, আপনকে উদ্ধার করে করে ক্লিনিকে পাঠায়। পরে ধৃত হামজাকে হালকা গণপিটুনি দিয়ে স্থানীয় কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন ও একই ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আলতাফ শেকের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই সময়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আজিজুল হক লাবলু, ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক আবু সাঈদ মিয়া হান্নান, ফরিদপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান খান প্রমুখসহ ও স্থানীয় বেশ জনতা উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারকৃত পঁচিশ হাজার পাঁচশত টাকাসহ তাদের দু'জনকেই থানায় নিয়ে যায়। এর আগে স্থানীয় উপস্থিতি তাদের কথাবার্তা শুনে ধারণা করছেন, হামজাকে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা ও গিফট দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম ছারোয়ার তাকে বলাৎকার করতেন। ব্যাপারটা স্পষ্ট না করলেও হামজা উপস্থিত জনতাকে জানান, 'আমাকে হুজুরের ভালো লাগে, আমি ছিনতাইকারী নই'। তিনি আরো জানান, হুজুর আমার সাথে মাঝে মাঝে দেখা করেন, গিফট দেন ও টাকা পয়সা দিয়ে থাকেন দেন। গত রমজানের এই সময়ে এসেও তাঁকে পাঞ্জাবি ও ঈদ খরচ বাবদ এক হাজার টাকা দিয়ে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।'
শিক্ষক গোলাম ছারোয়ার যা যা বলেছেন, ঘটনাস্থলেই তার অনেকটাই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, হামজাকে ধরতে গিয়ে আহত শিক্ষার্থী আপনের এর মাথায় দু'টো সেলাই লেগেছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন।
ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত হামজা কাজী (২৪) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শামকুড় নামক এলাকার আইয়ুব কাজীর ছেলে বলে জানা গেছে। তিনি গত সাত মাস যাবত কানাইপুরের মালাঙ্গা এলাকার মুকিম মাতুব্বরের বাসায় মা ও বোনকে নিয়ে ভাড়া থাকেন ও কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন বলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান হামজা। বুধবার ওই হুজুরের (শিক্ষক গোলাম ছারেয়ার) অনুরোধে তিনি কানাইপুরে আসেন এবং আসার সময় তার কৃষিকাজের হাতিয়ার কাস্তেটি মেরামত করতে হাতে করে নিয়ে বাজারে এসেছিলেন বলেও জানান তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পীযুষ কান্তি হালদার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, 'ছিনতাইকারী হিসেবে জনতার হাতে ধৃত হামজা ও মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম ছারোয়ারকে আমরা থানায় নিয়ে যাচ্ছি। থানায় তাঁদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।'
বুধবার রাতে এই রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
(আরআর/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)