কেন্দুয়া সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে ‘সকালে নিয়োগ দিয়ে বিকেলেই বাতিল’
অবশেষে সেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষই পেলেন নিয়োগ, ৬০ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন বন্ধের জট খুলেছে

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : নেত্রকোনার কেন্দুয়া সরকারি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ নিয়ে নাটকিয়তার অবসান ঘটেছে। গত ১৩ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় কলেজের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল আলম কে। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-১ মুহাম্মাদ শফিউল বশর স্বাক্ষরিত এক পত্রে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁকেই নিয়োগ দিয়েছিলেন। সকালে নিয়োগ দেওয়ার পর আবার ওই দিন বিকেলেই অদৃশ্য কারণে অপর একটি পত্রে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল। এ নাটকের শিকার হয়েছিলেন ৬০ শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় ওই কলেজের ৬০ জন শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্ধ ছিল। অবশেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মো: রফিকুল ইসলাম হিলালীর মধ্যস্থতায় শিক্ষকদের বিরোধের অবসান ঘটে।
এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম হিলালীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কলেজের শিক্ষকদের দন্দের অবসান ঘটাতেই তাদেরকে নিয়ে বসে বিরোধ মিঠিয়ে দিয়েছি। যিনি দায়িত্ব তিনি একজন সিনিয়র শিক্ষক। আশাকরি তাদের মধ্যে কোন দন্দ নেই। ফলে পূর্বের বাতিলকৃত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল আলমকেই পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ পাওয়ার পর ৬০ শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন ভাতার জট খুলেছে। ঈদ উপলক্ষে এক সাথে দুই তিন মাসের টাকা পেয়ে তারা খুব খুশি। কলেজের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছিল। আমাদেরতো কোন দোষ ছিল না। কিন্তু অধ্যক্ষ না থাকায় আমরা বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট করেছি। এখন শফিকুল আলম স্যার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় আমরা সবাই বেতন ভাতা পেয়েছি। আমরা ঈদের আগে অনেক টাকা পেয়ে ঈদের মতোই আনন্দ উপভোগ করছি।
কেন্দুয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ উত্তম কুমার কর নিয়ম মোতাবেক কয়েক মাস আগে অবসরে যান। তার স্থলে জেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার। তিনিও গত বছর ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার সময় কলেজ শিক্ষক আব্দুল মালেকের নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে ৭ জন শিক্ষক আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের একটি তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। এতে জেষ্ঠ শিক্ষক শফিকুল আলমের নাম ১ নাম্বারে লিপিবদ্ধ করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষকদের মধ্যে দুই তিনটি গ্রুপ হয়ে যায়। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দেয় চরম বিশৃংখলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য শফিকুল আলম। বিধিমোতাবেক গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কলেজ-১ মুহাম্মাদ শফিউল বশর এক চিঠিতে শফিকুল আলমকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু এক রাজনৈতিক দলের নেতাদের চাপের মুখে সকালে নিয়োগ দিয়ে বিকেলেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নিয়োগ বাতিল করা হয়।
কলেজের এক ছাত্র অভিভাবক বলেন, এটি এখন নামেই কলেজ। কলেজে কোন ক্লাশ হয় না। ছাত্র/ছাত্রী চেনেনা কোন শিক্ষককে আর শিক্ষক চেনেন না কোন ছাত্র/ছাত্রীকে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না থাকায় কলেজের সকল শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ এবং দেখা দিয়েছিল বিশৃংখলা। এতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে সহকারী অধ্যাপক শফিকুল আলম নিয়োগ পাওয়ায় শিক্ষদের মধ্যে দ্বন্দের অবসান ঘটেছে এবং ৬০ জন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন ভাতা পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুঠেছে। কলেজের সকল শিক্ষকগণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল আলমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এর পর থেকে তিনি নিয়মিত ভাবে কলেজে আসা যাওয়া করছেন।
আজ রবিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা আব্দুল মালেক বলেন, শফিকুল আলম স্যার আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। তবে এজন্য তিনি আমাকে কোন লিখিত দেননি বা লিখিতভাবে বুঝেও নেননি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল আলম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ পেয়ে আমি কলেজে এসেছি, সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছি। সবাই আমাকে আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করছেন। আমি চাই সকলকে নিয়ে কেন্দুয়া সরকারি কলেজকে একটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে।
(এসবি/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২৫)