রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমানের দেড় বিঘা জমির উপর থাকা পুকুরের দুই লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করা হয়েছে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় ওই পরিবারের তিন সদস্যসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফরিদা ইয়াছমিন, রবিউল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন, আমিনুর ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুন, একই গ্রামের রশীদ গাজীর ছেলে কমল হোসেন ও তার স্ত্রী রুমা খাতুন।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে আলীপুর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে মিজানুর রহমানের দখলীয় ৪৫ শতক জমিতে থাকা পুকুরটিতে টানা জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানালেন, আগে একবার জাল টানা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার টানা হচ্ছে। রুই, কাতলা ও মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মিজানুর রহমানের প্রতিপক্ষরা ধরে নিয়ে গেছে। মাছ ধরতে বাধা দেওয়ায় ফরিদা ইয়াসমিন, রোজিনা ও নাজমাকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। মাছ ধরার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় তাদের দুটি মোবাইল ছিনতাই করা হয়েছে। আহতদের রক্ষায় এগিয়ে এলে কমল হোসেন ও তার স্ত্রী রুমাকে মারপিট করা হয়েছে। হামলাকারিদের দেওয়া ১৮ মার্চের কাল্পনিক অভিযোগের তদন্তে এসেছেন সদর থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সব এলাকাবাসী জানান যে, গত বছরের ৫ আগষ্ট থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী নয়, সাধারণ মানুষও জিম্মি হয়ে পড়েছে।

ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আলীপুর মৌজার বিআরএস ২৫৩ খতিয়ানের ৪৫ শতক জমি ২০১৪ সালের ৩১ নভেম্বর ৯৬৪৬ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা দলিলমূলে খরিদ করেন তারস্বামী মিজানুর রহমান। নাপত্তন করে তাতে ফসল লাগিয়ে ও পুকুরে মাছ চাষ করে আসছিলেন তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর ওই জমি একটি মহল জবরদখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ মার্চ দুপুর দুটোর দিকে একই গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ এর ছেলে নূর ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন, ইসমাইলের ছেলে জাহিদ হোসেন, গফফর চৌকিদারের ছেলে মোস্তফা, আবুল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর ও আলমগীর, জাহাঙ্গীরের ছেলে মোস্তফামহ ২০/২৫ জন তাদের পুকুরের পাশে থাকা শ্যালো মেশিনসহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে চলে যায়। বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলে কিছু জমি। বাধা দেওয়ার কারণে তারা মাছ লুট করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করলে পুলিশের সহায়তায় তারা শ্যালো মেশিন উদ্ধার ও বাঁশের বেড়া অপসারন করেন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষরা থানায় মিথ্যা অভিযোগ করলে বৃহষ্পতিবার রাতে উপপরিদর্শক মাসুদ রানা তাদের বাড়িতে তদন্তে জান।

ফরিদা ইয়াসমিন আরো জানান, ১৯ মার্চ মাছ লুটপাটের অব্যহত হুমকির কারণে তিনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০ মার্চ পিটিশন ৪৫২/২৫ নং মামলা করেন। বিচারক আগামি ২৯ জুনের মধ্যে জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলায় আব্দুল ওয়াহেদ এর ছেলে নূর ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে ওই সাতজন বিবাদীসহ তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তাদের পুকুরে জাল ফেলে মাছ লুট করা শুরু করে। বাধা দেওয়ায় তাকেসহ রোজিনা ও নাজমাকে পিটিয়ে জখম করে। তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে এলে কমল হোসেন ও তার স্ত্রী রুমাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে প্রতিপক্ষরা তাদের পুকুরের দুই লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করলেও তাদের (ফরিদা) বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ করে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। এ ছাড়া তার সন্তান প্রান্তকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক এর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২২, ২০২৫)