রমজানেও ২ সন্তান ও অন্ধ মাকে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটে মহিরের

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : দিনমজুর পঞ্চাশোর্ধ মহির উদ্দিন। ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। বড় ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছেন বেশ আগেই। বছর তিনেক আগে মরণঘাতী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রীও মারা গেছে। বর্তমানে ১২ বছর বয়সী রাকিব হোসেন, ৮ বছর বয়সী জলি খাতুন এবং ৯০ ঊর্ধ দৃষ্টিশক্তি হারানো বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাঙ্গাচোরা টিনের দোচালা খুপরি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত মহির উদ্দিন এখন আর আগের মতো করতে পারেন না কাজ। এদিকে বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও দুই শিশু সন্তানের দেখভাল খাওয়া-দাওয়া, রান্না-বান্না সবই নিজ হাতে করতে হয় তাকে। কাজ না থাকায় এমন অনেকদিন আছে মা ও সন্তানদেরকে নিয়ে তাকে না খেয়েই কাটাতে হয় সারাটা দিন।
পবিত্র রমজান মাসেও বাড়িতে জোটে না একটু ইফতার। নিজে মসজিদে গিয়ে ইফতার করেন। সেখান থেকেই শিশুসন্তান এবং মায়ের জন্য আনা যৎসামান্য ইফতার তাদের মুখে তুলে দেন। সেহরির সময় কোনরকম আলু সিদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়ে রাখেন রোজা। কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজান এবং ঈদের আনন্দ প্রতিটি মুসলমানের ঘরে বিরাজ করলেও মহির উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধার যন্ত্রনাই যেখানে মেটে না সেখানে ঈদ আনন্দের কথা অচিন্তনীয়। অন্যের সাহায্য সহযোগিতাও মেলেনা সেভাবে। যে কারণে খুব কষ্টেই দিন যায় তাদের।অভাবের কারণে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেন না। হতদরিদ্র,নিঃস্ব,অসহায় এ মানুষটির বাড়ি ঝিনাইদহের মহারাজপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা টেংরা বিশ্বাসের ছেলে মহির উদ্দিন।
তার প্রতিবেশী মাসুরা বেগম জানান,ছেলে মেয়ে এবং অন্ধ মাকে নিয়ে মহির ভাই খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেন। সন্তান দুটো ছোট,আর বৃদ্ধা মা চোখে দেখেন না। তাই তাদের সব কিছু দেখভালের দায়-দায়িত্ব তার ঘাড়েই পড়েছে। আমরা সাধ্যমত সাহায্যের চেষ্টা করি তাদের। রোজার মাসে কাজ করতে না পারায় তার অবস্থা আরও খারাপ। সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি অসহায় হতদরিদ্র এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াই তাহলে হয়তো তাদের রোজা ও ঈদ ভালো কাটবে।
কান্না জড়িত কন্ঠে অসহায় মহির উদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান,ক্যান্সারের স্ত্রী মরে যাওয়ার পর ছোট দুই বাচ্চা ও অন্ধ মাকে নিয়ে কি যে কষ্ট করছি তা আমার আল্লাই ভালো জানে। এখন কাজও হয় না আগের মত। আবার অসুস্থ শরীরে কাজ করতেও পারি না আগের মত। এতগুলো পেটের খাবার জোগাড় করা আমার জন্য খুব কষ্টের। আবার নিজেই রান্না করে মা ও সন্তানদের খাওয়াতে হয়। দোচালা ভাঙ্গা ঝুপড়ি ঘরে বালিশে মাথা রাখলেও অনেক সময় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘুম আসেনা। মা ও বাচ্চাদের পরনের কাপড়ও ছিড়ে গেছে। কিভাবে চলবে সামনের দিনগুলো সে ভাবনায় ভাবি সারাক্ষণ । তাই সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের নিকট আমার চাওয়া, যদি সম্ভব হয় আমার মত অসহায় লোককে একটু সহযোগিতা করবেন।
(এসই/এএস/মার্চ ১৮, ২০২৫)