ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার। উন্নত দেশগুলোতে এ বৈষম্য কিছুটা কমলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি এখনো একটি বড় সমস্যা। কর্মসংস্থান, বেতন, পদোন্নতি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা বিভিন্নভাবে অবহেলিত হন। এই বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন নীতি পরিবর্তন, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

নারীর প্রতি কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের ধরন

১. নিয়োগ ও বেতন বৈষম্য: অনেক ক্ষেত্রে নারীদের একই কাজের জন্য পুরুষদের তুলনায় কম বেতন দেওয়া হয়।

২. পদোন্নতির সুযোগ কম: নেতৃত্বের জায়গায় নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, যা পদোন্নতিতে বৈষম্যের প্রমাণ।

৩. কর্মস্থলে যৌন হয়রানি: অনেক নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হন, যা তাদের পেশাগত উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

৪. মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুযোগের অভাব: অনেক প্রতিষ্ঠান নারীদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা দিতে চায় না বা তাদের চাকরি হারানোর ভয় থাকে।

৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ কম: নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকায় তাদের সমস্যা যথাযথভাবে সমাধান হয় না।

বৈষম্য দূর করার উপায়

১. নীতিগত পরিবর্তন ও আইন প্রণয়ন

সরকার ও বিভিন্ন সংস্থাকে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যা কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য কমাবে।

নারীদের জন্য সমান বেতনের আইন কার্যকর করা।

মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা।

কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

২. সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রসার

কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন করতে হবে।

কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈষম্যের বিষয়টি সম্পর্কে জানানো এবং তা প্রতিরোধের উপায় শেখানো প্রয়োজন।

৩. নারী নেতৃত্বের সুযোগ বৃদ্ধি

প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে হবে, যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

৪. কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা জরুরি।

ভুক্তভোগীদের জন্য সুরক্ষিত অভিযোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. কর্পোরেট ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

নারীদের শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজের জন্য নয়, বরং নেতৃত্ব ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের যোগ্য হিসেবে দেখার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

পরিবার ও সমাজে পুরুষদের সহযোগিতার মানসিকতা বাড়াতে হবে, যাতে নারীরা সহজে কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন।

পরিশেষে বলতে চাই,নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে হলে সমাজ, পরিবার, কর্মস্থল এবং সরকার—সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আইন ও নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করা গেলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে এবং দেশ আরও দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।