ছাত্র রাজনীতিও বন্ধ চান তিনি
আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চান আবরারের মা

মো: মিশুক আহমেদ জয়, কুষ্টিয়া : বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের রায়ে সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছেন তার পরিবার। পূর্বের রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের এ রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া রায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল রাখা হয়েছে।
আজ রবিবার বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায় ঘোষণায় সকাল থেকেই কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডের বাসভবনে টেলিভিশনের সামনে বসে ছিলেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন, এসময় তার আত্মীয় স্বজনরা আসেন মাকে শান্তনা দিতে। রায় ঘোষণার পর আবরারের ছবি ও সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসপত্র নিয়ে আবেক আপ্লুত হয়ে পড়েন সবাই।
গণমাধ্যমে কথা বলার সময় মা রোকেয়া খাতুন বলেন, রায়ে সন্তুষ্ঠ তারা, তবে কোন কিছুতেই তো আর তার ছেলে ফিরে আসবে না। তবে একটি বিচার যে হলো সেটাতেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন রায় কার্যকরের কোন বাধা নেই, সেই কারণে দ্রুত এ রায় কার্যকর চান তারা। আর পলাতক আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী তোলেন। এছাড়াও তিনি বুয়েটসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চান। কারণ রাজনীতি থাকলেই আবরারের মত ঘটনা ঘটবে, র্যাগিং থাকবে। শিক্ষা জীবন শেষ করে সব বাবা মায়ের ছেলে মেয়ে ফিরে আসার গ্যারান্টি দিতে হবে।
এসময় আবারার ফাহাদের দাদা আব্দুল গফুর বলেন, আসামীদের ফাঁসি কার্যকর চান। তিনি বলেন, আবরার তার খুব প্রিয় ছিল। আমার মত আর কোন দাদার অবস্থা যেন এমন না হয়।
আবরারের চাচী মমতাজ পারভিন বলেন, আবরার আর ফিরে আসবে না। আমরা মেধাবীদের সাথে এমন ঘটনা চাই না। রায়ে আমরা সন্তুষ্ঠ। তবে তখনই পুরোপুরি খুশি হব যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
আবরারের আরেক চাচী লথিফুন নাহার বলেন, আবরার আমাদের গর্ব ছিল। খুব নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই সরকারের প্রতি ধন্যবাদ তারা আসামীদের ফাসিঁ দ্রুত কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুন্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে একদিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
(এমজে/এসপি/মার্চ ১৬, ২০২৫)