ঋণ পরিশোধ ও মাদকের টাকা জোগাতেই হত্যাসহ ডাকাতি
.jpg)
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : কেউ মাদকাসক্ত আবার কেউ ঋণগ্রস্ত। মাদক ও ঋণ পরিশোধের টাকা জোগাড় করতেই হত্যাসহ ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, খুনিরা জেনে বুঝেই এর আগে কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের লাখিরপাড় গ্রামের দন্তচিকিৎসক পল মজুমদারের বাড়িতে গত ৮ ও ১০ মার্চ তারিখে ঘটনা ঘটনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়। ডাকাতির সময় পল মজুমদারদের ছেলে পিয়াস মজুমদারকে হাত পা বেঁধে হত্যা করে রেখে যায় ডাকাত দল। এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের পিতা পল মজুমদার বাদি হয়ে কোটালীপাড়া থানায় অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা সহ একটি ডাকাতি মামলা করেন।
পরে পুলিশের একটি টিম এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অভিযানে নামে। ঘটনার পরদিন ১২ মার্চ সন্ধ্যায় কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের কুশলা বাজারের খান মার্কেট থেকে থেকে বংকুরা গ্রামের সোহরাব খানের ছেলে মোর্শেদ আলম ওরফে কামালকে গ্রেফতার করে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ঘটনায় জড়িত থাকার স্বীকার করে । তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর আসামি কোটালীপাড়া উপজেলার চৌরখূলী গ্রামের আতা শেখের ছেলে সামিউল শেখ সামিউল শেখকে বাগেরহাটের কচুয়া থানার কামারগাতী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্য অভিযুক্ত শওকত আলী ভুঁইয়াকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি কোটালীপাড়া উপজেলার বংকুরা গ্রামে। এসময় আসামিদের কাছ থেকে নগদ ২৪ হাজার ১ শত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতারের পর আসামীরা জানিয়েছে, তারা কেউ মাদকাসক্ত আবার কেউ ঋণগ্রস্ত। মূলত মাদক ও ঋণের টাকা জোগাড় করতেই তারা এই ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ডাকাতির সময় তারা ঘর থেকে নগদ ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা ও একটি রুপার চেইন লুট করে বলে জানিয়েছে । ৫ জন হত্যা সহ লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা করা হয়েছে । বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাদি দন্ত চিকিৎসক পল মজুমদার ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে ঘরে রেখেছিলেন। এ খবর গ্রেফতারকৃতরা কোন না কোন ভাবে জেনে যায়। ঘটনার দিন গত ১১ মার্চ পল মজুমদার ও তার স্ত্রী নার্স অনিতা বৈদ্য তাদের কর্মস্থলে যান। এ সুযোগে দুপুরের দিকে আসামীরা ৫জন মিলে প্রথমে বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে তারা টাকা-মালামাল লুট করছিলো। পল মজুমদারের ছেলে পিয়াস মজুমদার এটি দেখে ফেলা। তাকে প্রথমে তারা হাত পা বেঁধে ফেলে। লোক জানাজানি হয়ে যাবে এ আশংকায় তারা তাকে হত্যা করে । পরে ঘর থেকে ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা লুট করে তারা পালিয়ে যায়।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আলোচিত ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৫ ১৪ ও ১২ মার্চ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সকালে লাখিরপাড় গ্রামের দন্ত চিকিৎসক পল মজুমদার ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের নার্স অনিতা বৈদ্য প্রতিদিনের মতো তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যান । এ সময় এই দম্পতির একমাত্র ছেলে পিয়াস মজুমদার বাড়িতে ছিল। এ সুযোগে পিয়াসকে খুন করে ডাকাত দলের সদস্যরা বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করে নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুটে নেয় ।
(টিবি/এএস/মার্চ ১৬, ২০২৫)