প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে দোল উৎসবকে  ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে ভক্তের ঢলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তিন দিন ব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা (গৌর পূর্ণিমা) উপলক্ষে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ন্যাড়া (ঘর) পোড়ানোর মধ্য দিয়ে দোলযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুক্রবার (১৪ মার্চ) এ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোমযজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত মন্দিরে দোল ঠাকুরের পায়ে আবির দিয়ে জগতের মঙ্গলকামনা করেন পুরোহিত।

এ সময় উলুধ্বনি ও শ্রী কৃষ্ণ ও রাধার স্মরণে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা সকাল থেকে শতশত ভক্তের সমাগম ঘটে এবং ভক্তরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহের সামনে রাঙিয়ে তুলেন নিজেদের। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা তাদের মনের কামনা বাসনাসহ সংসারে সুখ-শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।

জানা যায়, দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন। পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করা হতো। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’।

জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি বাসা-বাড়িসহ মন্ডপ-মন্দিরে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলে। এছাড়াও এই উৎসবকে ঘিরে শনিবার ঐতিহ্যবাহী দোল উৎসব (মেলা) অনুষ্ঠিত হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুরের বিউটি রানী ও রাধারানী জানান, আমরা প্রতি বছর গৌর পূর্ণিমায় তিথীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে সংসারের পাশাপাশি দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে প্রার্থনা করি। এবছর দোল উৎসবের কোন কমতি মনে করছেন কি না এমন প্রশ্ন করলে তারা জানান, দোল উৎসবের কোন কমতি মনে করছি না। তবে গত বছরও যেভাবে দোল উৎসব পালন করছি এবছরও করছি।

পূঁজারী সৌরেন্দ্র নাথ গোস্মামী ও বীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন জানান, উপজেলার বেশির ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দোল উৎসব হিসাবে শুক্রবার দিনব্যাপী উপবাস থেকে ভক্তরা শ্রী কৃষ্ণের চরণে ধাবিত হয়। শনিবার দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে দোলের মেলায় ব্যাপক আনন্দ উৎসব মূখর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর মেলা কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক দিনোবুন্ধ রায় জানান, দোল উৎসব আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। তাই প্রতি বছরের এ বছরও নাওডাঙ্গা জমিদার বাহাদুর শ্রীযুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বক্সীর বাড়ির উঠানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দোল উৎসবটি পালন করা হয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে দোল উৎসব পালন করতে পারে এজন্য পুলিশ বিভাগ থেকে অতিরিক্ত টহলের পাশাপাশি গ্রাম পুলিশেরও টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।

(পিএস/এসপি/মার্চ ১৪, ২০২৫)