যমুনা রেলসেতুর কারণে ট্রেনযাত্রায় সময় কমেছে, বাড়ছে ভাড়া
.jpg)
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের অধীনে যমুনা নদীতে নবনির্মিত রেলসেতুর ওপর দিয়ে মাত্র ৫ মিনিটে পার হচ্ছে ১৫ জোড়া আন্তঃনগর ও ১ জোড়া মেইল ট্রেন। যে কারণে যমুনা রেলসেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনের যাত্রার সময় কমেছে। যমুনা নদী পার হতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৫ মিনিট। আগে লাগত ২০ থেকে ২৫ মিনিট। তবে এজন্য উত্তরের রেলযাত্রীদের গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া। নতুন সেতু ব্যবহারের জন্য আসনভেদে ভাড়া বাড়ছে ৪৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। আগামী ১৯ মার্চ থেকে বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একতা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, ঈশ্বরদী থেকে ঢাকাগামী ঢাকা কমিউটার, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ও সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস আপ ও ডাউন ট্রেন নতুন সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি ট্রেনেরই গন্তব্যে পৌঁছাতে কম সময় লাগছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে সময় কমেছে একতা এক্সপ্রেস (৭০৬ ডাউন) ট্রেনের। এ ট্রেন পঞ্চগড় স্টেশন থেকে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। এ ট্রেন আগে ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাতো। নতুন সময়সূচিতে এ ট্রেন ৩০ মিনিট কম সময়ে গন্তব্য পৌঁছাবে।
ঈশ্বরদী জংশনের স্টেশন মাস্টার সুজন কুমার জানান, যমুনা রেলসেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে চলাচল করছে। দু’একটা ট্রেন কিছুটা বিলম্বে চলছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা হাসিনা খাতুন জানান, যমুনা রেলসেতু চালুর পর প্রায় সব ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন হয়েছে। আগামী ১৮ মার্চ এই সেতুর দুটি লাইনই খুলে দেওয়া হবে। তখন আর কোনো ট্রেনের বিলম্ব হবে না। যমুনা সেতু চালু হওয়ার ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেন চলাচলের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এতে ট্রেন চলাচলে নতুন গতির সঞ্চার হবে।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, নতুন সেতু চালুর ফলে পুরোনো যমুনা সড়কসেতু দিয়ে আর ট্রেন চলাচল করছে না। এখন মূল সেতু পার হতে ট্রেনে লাগবে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিট।
ভাড়া বৃদ্ধি প্রসংগে পাকশী বিভাগীয় সহকারি বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, আগে যমুনা সেতুর সঙ্গে যুক্ত রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ছিল ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এই সেতুর এক কিলোমিটার সমপরিমাণ ১৬.৮০ কিলোমিটার রেল লাইন পরিমাপ করা হতো। সেইসঙ্গে এই সেতুর দুই পাশের স্টেশনের দূরত্ব ছিল ৫ কিলোমিটার করে ১০ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে এ রেললাইনের দূরত্ব ছিল ৯১ কিলোমিটার। নবনির্মিত রেল সেতুর দূরত্ব ৪.৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল শুরুর সময় ১ কিলোমিটার রেলসেতু সমপরিমাণ ২৫ কিলোমিটার রেললাইনের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়। রেলসেতুর রণাবেণ চার্জ হিসেবে এটি নির্ণয় করা হয়। সেইসঙ্গে এই সেতুর দুই পাশে ১০ কিলোমিটার রেললাইন স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এ রেলসেতুর সমন্বিত দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। নবনির্মিত সেতুর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার থেকে আগের রেল সেতুর ৯১ কিলোমিটার বাদ দিলে নতুন রেল সেতুর বর্ধিত সমন্বিত দূরত্ব ৩৯ কিলোমিটার। এই বর্ধিত ৩৯ কিলোমিটার সেতুর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে রেলে কিলোমিটার প্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হয়। এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনে বিরতিহীন চার্জ যুক্ত হয় আরও ১০ শতাংশ। দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে ভাড়ার হার কিছুটা কমবেশি আছে। আন্তঃনগর ট্রেনেও বিভিন্ন শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি সিট ও এসি বার্থ শ্রেণি রয়েছে। প্রতিটি আসনের ভাড়া নির্ধারণে এসব হিসাব আমলে নেওয়া হয়।
(এসকেকে/এএস/মার্চ ১৪, ২০২৫)