ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের চরম উত্তেজনার মধ্যেও থেমে নেই চোরাকারবারিরা। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়িত এপার থেকে ওপারে মানবপাচার পাচার করছে তারা।

দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় ভীসা বন্ধ থাকার ফলে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়িত অবৈধ ভাবে ভারতে যাচ্ছে মানুষ। একই পথে একই ভাবে ভারত থেকে আসছে মাদক। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আটক করলেও পুরোপুরি লাগাম টানতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সীমান্ত থেকে প্রতিনিয়ত মাদকের চালান উদ্ধার করলেও কোনো কারবারিকে আটক করতে পারছে না বিজিবি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভু্যুত্থানের পর প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ভারতীয় নাগরিকসহ এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি। এদিকে এসব মাদকের মালিক ও মানবপাচারকারীরা অধঁরা রয়ে গেছেন। ফলে এ সীমান্ত পথে থামানো যাচ্ছে না মানবপাচার। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা মাদক পাচার বন্ধে যেমন তৎপরতা চালাচ্ছে, তেমনই সীমান্ত পথে অবৈধ অনুপ্রবেশ রেধে কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় ৭২ কিলোমিটারজুড়ে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কিলোমিটার সীমান্তের এপার ওপার নেই কোনো কাঁটাতার । কাঁটাতারহীন সীমান্তের ৯টি গ্রাম দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাচালান ও মানবপাচার করা হয়। এই ৯টি গ্রাম হচ্ছে বাঘাডাঙ্গা, পলিয়ানপুর, যাদবপুর, জুলুলি, শ্যামকুড়, মড়কধ্বজপুর, রায়পুর, কচুয়ারপোতা ও লেবুতলা। এই এলাকাগুলোতে বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা একাধিক ব্যক্তি এসব সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভিসা না পাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকেই সীমান্তবর্তী এসব এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে গত জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎ করেই মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে।

সীমান্ত এলাকাগুলো ঘুরে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলা বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে কাঞ্চনপুর ও বাঘাডাঙ্গা সীমান্তে আল-আমিন, রায়পুর সীমান্তে কুটি মিয়া, শ্যামকুড় সীমান্তে মোহাম্মদ আলী, নেপা সীমান্তে নওশের আলী নিয়ন্ত্রণ করছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে এঁরা সে সময় তাদের পরিচয় দিয়ে চোরাচালানি ও মানবপাচার করতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্ত এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের সীমান্তে মানব পাচারের প্রবণতা বেড়ে যায়। মাঝে কিছুদিন প্রশাসনের তৎপরতায় কমে গেছিল। তবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে আবার তা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। রাত নামলেই এলাকাগুলোতে বিভিন্ন যানবাহনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সীমান্তের চিহ্নিত কয়েকজন চোরাকারবারির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভারতে যাচ্ছে।

চোরাকারবারিরা একেকজন মানুষকে ভারতে পার করতে ব্যক্তি বিশেষ একেক ধরণের টাকা নেয়। এই কারবারিরা আবার ভারত থেকে বিভিন্ন ধরণের মাদক এনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেয়। এ সকল কারবারিরা আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় চললেও এখন চলছে বিএনপি নেতাদের নির্দেশনায়।’

মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ উদ্দিন মৃধা বলেন, ‘থানায় প্রতিনিয়ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হচ্ছে। তবে পাচারকারিরা অধরা থেকে যাচ্ছে। ফলে এই সীমান্তে মানবপাচার কিছুতেই থামছে না। তবে যাচ্ছে মানব পাচার রোধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।’

এসব বিষয়ে ঊর্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মহেশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন,‘সীমান্ত এলাকায় মানব পাচার রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা একাধিকবার বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। শিগরিই এ সমস্যার ঘটবে বলে আশা করছি।’

(একে/এএস/মার্চ ১৪, ২০২৫)