শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দিনাজপুর কড়াই বিলের সহস্রাধিক মুকুলে পরিপূর্ণ আম গাছ কেটে সাবার করে ফেলেছে বিএনপি'র দুই নেতা।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মকছেদ আলী মঙ্গলীয়ার নেতৃত্বে আম গাছগুলো কর্তন করেছে জেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব জবাইদুর রহমান। তার দাবি তিনি টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো নিয়েছেন।

মুকুলে ভরপুর আম গাছগুলী দীর্ঘ ১০ দিন ধরে কেটে সরিয়ে ফেল্লেও আজ মঙ্গলবার বিরল উপজেলা প্রশাসন কিছু অংশ জব্দ করেছে। গাছের টেন্ডার বা গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানেনা,বন বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।

দিনাজপুর শহরের পশ্চিম উপকন্ঠে বিরল উপজেলায় কড়াই বিল। বিলের আয়তন ২৮ একর ও পাড়ের আয়তন ১৮ একর। পাড়ে রয়েছে, কড়াই, শিশু, আকাশমণি, মেহগনি, দেবদারু, আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, বেল, আমলকিসহ নানা প্রজাতির বনজ-ফলজ ও ঔষধি গাছ। প্রতি বছর শীত মৌসুমে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণে কড়াই বিল হয়ে ওঠে অপূর্ব সৌন্দর্যের নীলাভূমি।

রয়েছে বিলের পাড়ে সারি সারি টুল ও চেয়ার। এগুলোতে বসে পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বছর ব্যাপী পর্যটক ও বনভোজন পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকে কড়াই বিল। নাটক ও মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং চলে প্রায় সময়।

১৯৭৪ সালে ১৬ এপ্রিল তৎকালীন সরকার এই বিলটি বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতির নামে রেজিস্ট্রি করে দেয় (রেজি নং-৭৭১)। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৫০ জন। এই সমিতি কড়াই বিল ও তার আশপাশের এলাকাকে আরও দর্শনীয় করে গড়ে তুলতে সমিতি থেকে বিল পাড়ে লাগানো আরো আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল সহ হয় নানা ধরনের ফল গাছ।

কিন্তু,দেশের সম্ভাবনাময় অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র কড়াই বিলের সহস্রাধিক মুকুলে পরিপূর্ণ আম গাছ কেটে সাবার করে ফেলেছে বিএনপি'র দুই নেতা।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মকছেদ আলী মঙ্গলীয়ার নেতৃত্বে আম গাছগুলো কর্তন করেছে জেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব জবাইদুর রহমান। তার দাবি তিনি ৪ লাখ টাকা দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো নিয়েছেন।

তবে মুকুলে ভরপুর আম গাছগুলী দীর্ঘ ১০ দিন ধরে কেটে সরিয়ে ফেল্লেও মঙ্গলবার বিরল উপজেলা প্রশাসন কিছু অংশ জব্দ করেছে। গাছের টেন্ডার বা গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানেনা বন বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন।

বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা এসিল্যান্ড ইইশতিয়াক আহমেদ জানান, 'আমরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু গাছ জব্দ করেছি। জব্দকৃত গাছগুলো থাবায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এ নিয়ে মানলা দায়ের করা হবে। কড়াই বিলের এতো গাছ একিভাবে কাটা হলো আমরা কিছুই জানি না। কড়াই বিলের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারীদের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।'

এ বিষয়ে দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মুঠিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত বিএনপির নেতা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মকছেদ আলী মঙ্গলীয়া এবিষয়ে জানান, 'কড়াই বিল সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বিরল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু। আর আমি সহ-সভাপতি। ৫ তারিখে পট পরিবর্তনে পর সবাই আমাকে দায়িত্ব দেয় কড়াই বিলের। আমি কড়াই বিলের উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেছি। আম গাছ কেটে সেখানে লিচু গাছ লাগানো হবে। এ কারণে কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ৪ লাখ ১০ টাকার টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। আমাদেরই লোক গাছগুলো কাটছে। গাছগুলোতে আম ধরে না। তাই, কাটছি। লিচু গাছ লাগাবো।'

গাছ কর্তনকারি মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব জবাইদুর রহমান জানান, 'আমি গাছগুলো কিনে নিয়েছি সাড়ে ৪ লাখ টাকায়। এ বিষয়ে ইউএনও সাহেবকে মঙ্গলীয়া চাচা জানাইনি জেনে দুঃখ পেলাম। উনার (মকছেদ আলী মঙ্গলীয়া) উচিৎ ছিলো সবাইকে জানানোর। এটা আমার কোন অপরাধ নেই। অপরাধ করলে তিনিই করেছেন।'

এ বিষয়ে কড়াই বিল সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বিরল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কড়াই বিল সমবায় সমিতি লিমিটেডের এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, ‘প্রতিবছর আম মৌসুমে গাছগুলো এক থেকে দেড় লাখ টাকায় ডাক (লিলাম) হয়। প্রায় এক হাজারের মতো গাছ। কিভাবে এই গাছগুলো কেটে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা হলো? গাছগুলোর দাম প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা হবে। তাছাড়া আমের মৌসুমে মুকুলে ভরা গাছগুলো কিভাবে কেটে বিক্রি করে তারা! এর বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমরা জোর দাবি করছি। প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলেইতো আমাদের ফ্যাসিবাদ আখ্যা দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দিবে বলে হুমকি দেয়। তাই প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস নেই আমাদের। অনুগ্রহ করে নাম প্রকাশ করে বিপদে ফেলবেন না, বাবা।'

(এসএস/এসপি/মার্চ ১১, ২০২৫)