১২০ ঘর ভূমিহীনকে উচ্ছেদ করেছে বিএনপি নেতা আজিজুলের সন্ত্রাসী বাহিনী
পিঠ বাঁচাতে মানববন্ধন করেছে হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামিরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের ভাঙানমারি গ্রামের ১২০ ঘর ভূমিহীন পরিবারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত অস্ত্র ও হত্যা মামলার আসামীদের নেতৃত্বে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে পত্রিকায় প্রকাশ করা সাংবাদিক হাফিজুর রহমান ও ভূমিহীর নেতা ওহাব আলী সরদারের বিরুদ্ধে এ মানববন্ধন করা হয়।
দেবহাটা কালিগঞ্জ ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন কালিগঞ্জের ইন্দ্রনগরের নবাব আলীর ছেলে বর্তমানে চিংড়িখালিতে বসবাসরত কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট’র কাছের লোক ও বিএনপি নেতা নলতা ইউপি চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর ও ইসহাক পাড়, আশাশুনির গোদাড়ার মোনায়েম হত্যা, দেবহাটার খলিশাখালির ভূমিহীর নেতা কামরুল হত্যা (পলাতক) মামলা, তিনটি অস্ত্র মামলা ও কমপক্ষে ১০টি চাঁদাবাজি, মারপিটের মামলার আসামী গত ২৪ জানুয়ারি বিলকাজলার এবাদুল গাজীর ছেলে খলিষাখালি থেকে ইসরাইল গাজী নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্য নায়ক শহীদুল ইসলাম, তালা উপাজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের মাছিয়াড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে ২০১১ সালে সাতক্ষীরা শহরতলীর কুকরালিতে জমি দখলের সময় রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হওয়া মামলার পলাতক, ২০১৭ সালে পিরোজপুরে র্যাব এর হাতে দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া মামলা, কালিগঞ্জের ২০১২ সালে চিংড়িখালিতে আশরাফ মীর, ইসহাক পাড় ও ২০০৬ সালে কবীর হত্যা মামলা, ঝায়ামারি গ্রামের সলেমান হত্যা মামলা, ২০২৪ সালের পহেলা নভেম্বর খলিষাখালির কামরুল হত্যা (পলাতক), ২০২৪ সালের মে মাসে কালিগঞ্জের ইউসুফপুর গ্রামে রাইসুলের বাড়িতে ডাকাতি মামলায় ১৬৪ ধারায় নাম উল্লেখ হওয়ার পর ১২ হাজার টাকা উদ্ধার হওয়া আসামী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারি আব্দুল হালিম ওরফে পাখরা হালিম, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ চারটি মামলার আসামী ভাঙানমারি গ্রামের সেকেন্দার আলী, একটি হত্যাসহ তিনটি মামলার আসামী আব্দুল গফুর, আলম হোসেন ও জাকির হোসেন।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসুচিতে অংশ নেওয়া খলিষাখালির জোহরা খাতুন, চিংড়িখালির খাদিজা বেগম, বৈরাগীর চকের নূরজাহান, ভাঙানমারির সবুজ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, তাদেরকে জোরপূর্বক মানববন্ধনে আসতে বাধ্য করেছ শহীদুল ইসলাম। না এনে চেয়ারম্যানকে দিয়ে মিথ্যা মামলার পাশাপাশি বসবাসরত সরকারি খাস জমি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ করায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী সরদারকে পিটিয়ে জখম করেছে চেয়ারম্যান বাহিনী। এ ছাড়াও তাদের ২০জনকে মারপিট করা হয়েছে।
বক্তারা ভাঙানমারিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া কালিগঞ্জ দেবহাটা ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওহাব আলী সরদার ও হামলাকারিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশকারি হাফিজুর রহমানের কঠোর সমালোচনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে জমি থেকে উচ্ছেদেও ঘটনায় তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবুরাবাদ মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়া মাত্রই ওহাব আলী সরদারকে পিটিয়ে জখম করার বিষয়টি নিয়ে উল্লাস করে বক্তব্য দেন।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ভাঙানমারি থেকে গত পহেলা মার্চ নির্যাতন ও উচ্ছেদ হওয়া সামছুর রহমান সরদার, আজিজুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, ইমরান হোসেন, সাবিনা খাতুন ও আমেনা খাতুন জানান, ২০০৫ সাল থেকে তারা তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ মতে ১০টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১০৭টি পরিবার ভাঙানমারিতে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে সেখানে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১২০টির বেশি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে(লিভ টু আপিল ৪৭২/২০১৬) ৯৭ একর জমি খাস হয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই জমি নলতার চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের নজরে আসলে তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ২০ বছর ধওে বসাবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে তারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। এরপরও আজিজুল ইসলামের পরিকল্পনায় তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মূল হোতা হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতিসহ কমপক্ষে দেড় ডজন মামলার আসামী চিংড়িখালির শহীদুল ইসলাম, তার ভাই কামরুল হত্যাসহ কমপক্ষে হাফ ডজন মামলার আসামী রবিউল ইসলাম বুল্লা, হত্যা, ডাকাতি ও অস্ত্র মামলাসহ কমপক্ষে এক ডজন মামলার আসামী পাখরা হালিম, ভাঙানমারির রহমতুল্লা গাজীর ছেলে আব্দুল ওয়াজেদ, বাবুরাবাদের জেহের আলী গাজীর ছেলে কামরুল হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবুর গাজী, সোবহান পাড়ের ছেলে রফিকুল পাড়, ভাঙানমারির বাবুর আলীর ছেলে পিয়ার আলী, মেছের আলীর ছেলে বাবুর আলী গাজী, আইয়ুব আলীসহ শতাধিক ভূমিদস্যু গত পহেলা মার্চ সকাল ৮টার দিকে জমি মাম করার নামে ভূমিহীন ১২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি, ভাঙচুর ও লুাটপাট শেষে তাদেরকে উচ্ছেদ করে। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনিসহ ২৬ জন ভূমিহীন নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হন। বিষয়টি জানানোর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা বিশ্বাস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সামছুর সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নলতার আজিজুল ইসলামের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লালিত শহীদুল, বুল্লা, হালিম, নোড়ার চকের আনারুল, রবিউল, প্রত্যেকেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলা থাকার পরও আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা একের পর এক জমি জবরদখলে নেমে পড়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
(আরকে/এসপি/মার্চ ০৫, ২০২৫)