আশাশুনিতে ভূমিহীন পল্লীতে বারবার তাণ্ডব, সেনাবাহিনীর দ্বারস্ত নির্যাতিতরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের মরিচ্চাপ নদীর রাধাবল্লভপুর গ্রামের মদনপাড়ার চরভরাটি জমিতে বসবাসরত ৩৫টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ পাঁচ দিনেও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার না করায় আসামীরা হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে।
এমনকি আসামীদের পরিবারের নারী সদস্যরা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরতে না পেরে নির্যাতিতরা আশাশুনি ক্যাস্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটানেন্ট রাদীদ রায়হান এর সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টায় দেখা করেছেন।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জাকির হোসেন গাজী জানান, রাধাবল্লভপুর গ্রামের ১৭৫ দাগসহ ১৮৩ থেকে ১৯০ দাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত সরকারি খাস জায়গার মধ্যে পাঁচ একর জমি প্রতিপক্ষ রইচউদ্দিন মোড়লসহ কয়েকজন জবরদখলের চেষ্টা করলে তার বাবা আজিজুল ইসলাম গাজী বাদি হয়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়ার পাশপাশি জমির দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিনিসহ ১৫ জন ভূমিহীন মৎস্যজীবি দল গঠণ করে গত ২৬ জানুয়ারি ডিসিআর পাওয়ার জন্য পাউবো’র কাছে আবেদন করেন।
আবেদন করার খবর পেয়েই প্রতিপক্ষ রইচউদ্দিন মোড়লসহ কয়েকজন ভূমিহীন জাহানারা খাতুন, রহিমা খাতুন ও মোহাম্মদ নামের এক শিশুকে পিটিয়ে জখম করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। থানা মামলা না নেওয়ায় হামলাকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রæয়ারি সকালে কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপি’র একাংশের সভাপতি জহির মোড়ল ও তার চাচাত ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ মোড়লের নেতৃত্বে ভূমিহীন পল্লীতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। হামলায় তিনিসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আশাশুনি উপাজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে আবু সাঈদ মোড়ল ও জহির মোড়লসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ কওে অজ্ঞাতনামা ৬০ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। তিনি ও সবুজ গোলদার ব্যতীত সকলকেই রবিবার বিকেলে ও সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত পাঁচ দিনে কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় আসামী নজরুল সরদারের স্ত্রী ফেরদৌসী, তাদের ছেলে সায়েদ, মুজিবর মোড়ল, রবিউল মোড়ল ও রফিকুল মোড়ল মামলার বাদিসহ সাক্ষীদের মোবাইল ফোনে ও সরাসরি হুমকি ধামকি অব্যহত রাখে। হাসপাতাল থেকে ১৩ জন ছাড়া পাওয়ার পরও হুমকি ধামকিতে বাড়িতে যেতে না পারায় নিরাপত্তা চেয়ে থানার কোন সহযোগাতিা না পাওয়ায় সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তারা আশাশুনি সেনা ক্যাম্পে যান। ক্যম্প কর্মকর্তা বিকষয়টি নিয়ে থানায় কথা বললে পুলিশ বিকেলে মদনপাড়ায় যাওয়ার পর তারা বাড়িতে ফেরেন।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। আসামীরা পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
(আরকে/এএস/মার্চ ০৩, ২০২৫)