কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

আজ রবিবার দুপুরে পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শনিবার রাতে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় পালং মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দুটি দায়ের করেন। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কানারগাঁও এলাকার এবাদুল বেপারী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাতে একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকায় ডাকাতি করে কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। তখন ডাকাতরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলিতে বাল্ক হেডের শ্রমিক পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মাসুম মিয়া (৩০) ও পিরোজপুরের কালিকাঠীর আলামিন ফকির (১৯) গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ডাকাতরা পালিয়ে শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের ভাসানচর এলাকায় ঢুকে পড়ে। এরই মধ্যে ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে যান।

জনতার ধাওয়া খেয়ে ডাকাতরা কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালানোর জন্য রাজগঞ্জ এলাকা দিয়ে নদীপথে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়রা বাল্কহেড দিয়ে ডোমসার এলাকার তেতুলিয়া গ্রামের নদীপথ আটকে দেয়। বাধা পেয়ে ডাকাতরা স্পিডবোট তীরে রেখে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ডাকাতরা হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে বাল্ক হেডের শ্রমিক ডোমসার মোল্লা কান্দি এলাকার তোতা মিয়া (৩৫) ও স্থানীয় ১জন আহত হন। পরে স্থানীয় জনতা সাত জনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয় এবং শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি কার্তুজ ও একটি স্পিডবোট উদ্ধার করেছে।

আহত পাঁচজনকে বর্তমানে পুলিশ পাহারায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় পালং মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছেন।

মাদারীপুরের থেকে ডাকাতি করে পালানোর সময় শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় গণপিটুনিতে আহত পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ৮-১০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- মুন্সিগঞ্জের কালিয়ারচরের রিপন বেপারী (৪০), বাংলাবাজার এলাকার রাকিব গাজী (৩০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডেরচরের আনোয়ার দেওয়ান (৫০), নাড়িয়ার নশাসন মাঝিকান্দি এলাকার সাঈদ (২৫) ও মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার সজীব (৩০)। এদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা. মিতু আক্তার বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে ফিরিয়ে আনা চারজনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, ডাকাতি ও গণপিটুনির ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। যেহেতু তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তাই হত্যা মামলার প্রস্তুতিও চলছে। নিহতদের মরদেহ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।

(কেএনআই/এসপি/মার্চ ০২, ২০২৫)