কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে গণপিটুনিতে ২ ডাকাত নিহত হয়েছে। আহত অবস্থায় আটক হওয়া আরও ৬ ডাকাত। ডাকাতের এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শনিবার (১ মার্চ) রাতে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গুলিবিদ্ধ তিন জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার জয়নাল মিয়ার ছেলে, বাল্কহেড শ্রমিক মাসুম মিয়া (৩০), পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কালিকাঠী এলাকার আনিস ফকিরের ছেলে, বাল্কহেড শ্রমিক আল আমিন ফকির ও শরীয়তপুরের পালং থানার ডোমসার মোল্লা কান্দি এলাকার দলিল উদ্দিনের ছেলে তোতা মিয়া (৩৫)।

এদিকে শনিবার সকাল তেতুলিয়া এলাকা থেকে জনতার পিটুনিতে আহত আরও ১ জন ডাকাত সদস্যকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে নিহত দুই সহ মোট ৮ জন ডাকাত সদস্য ধরা পরার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা ৫ ডাকাতকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪ জন ডাকাতের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলো আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সদস্য রাকিব গাজি (৩৮), পিতা- সানাউল্লাহ গাজি, গ্রাম- বানিয়াল মহেষপুর, মুন্সিগঞ্জ, রিপন (৪০), পিতা- বাচ্চু মিয়া, গ্রাম- কালীর চর, মুন্সিগঞ্জ, আনোয়ার (৫০), পিতা- মোহাম্মদ দেওয়ান, গ্রাম- কুন্ডেরচর, জাজিরা, শরীয়তপুর, সজিব (৩০), পিতা- হারুন তালুকদার, গ্রাম- কুতুবপুর, শিবচর, মাদারীপুর। এদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জের রিপন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকায় এক দল ডাকাত প্রবেশ করে ডাকাতির চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা ও কয়েকটি বাল্কহেড জাহাজের শ্রমিকেরা ডাকাত দলকে ধাওয়া দিলে ডাকাতেরা এলোপাথারি গুলি ছোড়তে ছোড়তে কীর্তিনাশা নদী পথ ধরে শরীয়তপুর অভিমুখে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডাকাতের গুলিতে কয়েকজন বাল্কহেড শ্রমিক আহত হন। এখবর মুঠোফোনে চারিদিকে পৌছানো হলে এবং স্থানীয়দের ডাক চিৎকারে অন্তত ১২ কিলোমিটার এলাকা জুরে কীর্তিনাশা নদীর দুই পাড়ে হাজার হাজার এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের তাড়া করতে থাকেন। ডাকাতদল আংগারিয়া ইউনিয়নের দাদপুর ঘোঁজা ও আংগারিয়া বড় ব্রীজ এলাকায় জড়ো হওয়া লোকদের লক্ষ্য করেও গুলি বর্ষণ করে। এক পর্যায়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার তেতুলিয়া ইটভাটা এলাকায় জনতা ট্রলার এবং বাল্কহেড জাহাজ দিয়ে নদীপথ প্রতিরোধ করলে ডাকতরা স্পীড বোট ফেলে তীরে নেমে পালানোর সময় জনতার হাতে ৬ ডাকাত আটক হয়। গণপিটুনিতে ২ ডাকাত নিহত হয়। বাকি ৫ জন আহত হয়। শনিবার সকালে আরও এক আহত ডাকাতকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আনা হয়।

ডাকাতের গুলিতে আহতদের মধ্যে পাঁচজন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং তিনজন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ দুই বাল্কহেড শ্রমিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুনতাসির খান বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলিবিদ্ধ চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একজন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং অন্যজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।

এরপর রাত ১২টার পরে গণপিটুনিতে আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের চিকিৎসা দিয়ে ঢাকয় স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া রাত ১টার পর মৃত অস্থায় আরও দুজনকে নিয়ে আসা হয়।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে মাদারীপুরের কালকিনি থেকে কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালানোর সময় শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকার লোকজন বাল্কহেড দিয়ে ডাকাতদের গতিরোধ করে। বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের গণপিটুনি দেয়। বিষয়টি জানার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহত ডাকাতদেরকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেন। এ সময় একটি দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

(কেএনএইচ/এএস/মার্চ ০১, ২০২৫)